ফটো অ্যাল্বাম
গোপালপুর। ওড়িশার সমুদ্রতীরে এক সুন্দর ছোট্ট শান্ত শহর। গোপালপুরের কিছু সুন্দর ছবি এবার আমাদের এই ফোটো অ্যালবাম্ এ রইল।
{gallery}sharat2010/gopalpur{/gallery}
ইচ্ছামতীর অ্যাল্বাম এ এই ছবিগুলি পাঠিয়েছেনঃ
অনিন্দ্য পাল,
কলকাতা
তুমিও কিন্তু ইচ্ছামতীর অ্যাল্বাম এ পাঠাতে পার এইরকম একগুচ্ছ ছবি। তোমার পছন্দের কোন বিষয় , বা ভাল লাগা কোন জায়গার ছবি পাঠিয়ে দাও ইচ্ছামতীর কাছে, এই ঠিকানায়ঃ
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সৃজন বিভাগ
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
আঁকিবুকি
অমৃতা তেওয়ারি
দ্বিতীয় শ্রেণী,মহাদেবী বিড়লা গার্লস' হায়ার সেকেন্ডারী স্কুল,কলকাতা
চিন্ময়ী ভট্টাচার্য্যি
সিনিয়র কে জি, অর্কলন কিন্ডারগার্টেন, উলান বাতার, মঙ্গোলিয়া
দেবারুণ দেব
তৃতীয় শ্রেনী,এপিজে স্কুল, সল্ট লেক, কলকাতা
দিশারী বোস
ষষ্ঠ শ্রেণী,ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ স্কুল, কলকাতা
ইন্দ্রানী জানা
পঞ্চম শ্রেণী,দ্য বি জি ই এস স্কুল, কলকাতা
ইন্দ্রনীল জানা
সপ্তম শ্রেণী,দ্য বি জি ই এস স্কুল, কলকাতা
মধুরিমা গোস্বামী
ষষ্ঠ শ্রেণী,ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ স্কুল, কলকাতা
নীলাগ্নি দাস
প্রথম শ্রেনী,মারিয়া'স পাব্লিক স্কুল, গুয়াহাটি
ঋত চট্টোপাধ্যায়
দ্বিতীয় শ্রেণী,ডন বস্কো স্কুল, লিলুয়া
শৌর্য মুখার্জী
ষষ্ঠ শ্রেনী (আফটারনুন), সাউথ পয়েণ্ট স্কুল, কলকাতা
শৌভিক সেনগুপ্ত
দ্বিতীয় শ্রেণী,ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ স্কুল, কলকাতা
শ্রেয়া বোস
প্রথম শ্রেনী,ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ স্কুল, কলকাতা
শ্রীজা বোস
প্রথম শ্রেনী,ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ স্কুল, কলকাতা
সৃষ্টি মৃধা
ষষ্ঠ শ্রেনী,ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ স্কুল, কলকাতা
শুভম গোস্বামী
দ্বিতীয় শ্রেণী,ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ স্কুল, কলকাতা
সুদীপা কুজুর
তৃতীয় শ্রেনী,বি ডি মেমোরিয়াল স্কুল, কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সৃজন বিভাগ
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
সংখ্যা নিয়ে খেলা
অনেকের ক্ষেত্রেই ছোটবেলায় মনে একটা ভুল ধারণার সৃষ্টি হয় যে অঙ্ক বা গণিত হল একটা খুব নীরস বিষয়। এই ভুল ধারণাই অনেক সময় বিষয়টাকে ভাল না বাসা আর অবহেলা করার কারণ। আর তার থেকেই অনেক সময় তৈরী হয় অকারণ ভয় আর দুশ্চিন্তার। সত্যি কথা বলতে গণিতের বিভিন্ন বিষয় নীরস হওয়া তো দূরের কথা, বরং খুবই মজার, রহস্যময় আর উপভোগ্য। আর এই মজাটা ধরতে পারলেই দেখবে খুব ভাল লাগছে, কোন ভয়েরও কারণ নেই। আর তোমার যদি এর মধ্যেই অঙ্ককে বেশ প্রিয় বিষয় বলে মনে হয়, তাহলে তো আর কথাই নেই। তার মানে তুমি এই মজাটা জেনেশুনে বা নিজের অজান্তেই ঠিক বুঝতে পেরে গেছ। গণিতের বিভিন্ন শাখার মধ্যে শুধুমাত্র Number Theory বা সংখ্যাতত্ত্বের মজার রহস্যগুলো নিয়েই এত বই লেখা হয়েছে যে সেগুলো একসাথে করলে অনেক বড় বড় বইয়ের তাক ভর্তি হয়ে যাবে। আমি আজ সেরকমই একটা মজার জিনিস দেখাব।
প্রথমে কিছু সংখ্যাকে কয়েকটা সারিতে পরপর লিখে ফেলি।
পাসকাল-এর ত্রিভূজ
খুব স্পষ্টভাবেই দেখতে পারছ যে প্রথম সারিতে রয়েছে একটা সংখ্যা, দ্বিতীয় সারিতে দুটো সংখ্যা, তৃতীয় সারিতে তিনটে এবং এইভাবে ক্রমশঃ বাড়তে থেকেছে। তা ছাড়াও সহজেই দেখতে পারছ যে প্রতি সারির প্রথম আর শেষ সংখ্যাটা হল '1' । কিন্তু অন্য সংখ্যাগুলো এল কোথা থেকে? ওগুলো কি আমি এমনিই মন থেকে ইচ্ছেমত লিখে গেলাম? আরেকটু ভাল করে দেখ ত ওদের মধ্যে কোন নক্সা খুঁজে পাচ্ছ কি না! যদি বলি যেকোন সারির পাশাপাশি দুটো সংখ্যার যোগফল তার ঠিক নীচের সারির তাদের মাঝের সংখ্যাটা, তাহলে কি নক্সাটা দেখতে পারছ? মিলিয়ে দেখ ত!
"পাশাপাশি দুটো সংখ্যার যোগফল নীচের সারির মাঝের সংখ্যার সমান"
এইবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ। উপরের ছবিতে তীরচিহ্ন দিয়ে সেটাই দেখিয়েছি। আর এবার তুমি ইচ্ছে করলে এই নিয়মটা মাথায় রেখে একের পর এক সারি এইভাবে লিখে ফেলতে পার। তাহলে চট্ করে একটা পেন বা পেন্সিল আর একটা কাগজ নিয়ে শুরু করে দাও। বাহ্, বেশ মজার না? এই সংখ্যার ত্রিভূজের মধ্যে আরও অনেক মজা লুকিয়ে আছে। সেগুলো একে একে বলছি। কিন্তু তার আগে এর ইতিহাস আর নামকরণের কথা একটু জেনে নেওয়া যাক।
সংখ্যার এই ত্রিভূজের বর্তমান নামকরণ হয়েছে সপ্তদশ শতকের ফরাসী গণিতজ্ঞ, পদার্থবিদ্, আবিষ্কারক, লেখক ব্লেজ পাসকাল-এর নাম অনুসারে। ১৬৫৩ সালে পাসকাল তার এক পান্ডুলিপিতে এই ত্রিভূজের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আর গণিতের বিভিন্ন বিভাগে এর প্রয়োগ আর উপযোগিতার কথা একত্রিত করে লেখেন, যা তার মৃত্যুর পর ১৬৬৫ সালে প্রকাশিত হয় 'ট্রিট্রিজ্ অব্ অ্যারিথমেটিক ট্র্যায়াঙ্গল' নামে। যদিও তার অনেক আগেই ভারতবর্ষ, চীন, পারস্য, গ্রীস এবং ইতালির গণিতজ্ঞদের কাজে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এঁদের মধ্যে ভারতের পিঙ্গল, পারস্যের আল-কারাজী, ওমর খৈয়াম, চীনের চিয়া সিয়েন, ইয়াং হুই - এদের লেখাতে এই সংখ্যার ত্রিভূজের কিছু প্রয়োগের কথা জানা যায়। কিন্তু, যেহেতু পাসকাল-ই প্রথম সামগ্রিকভাবে সমস্ত বৈশিষ্ট্য ও উপযোগিতার কথা লিপিবদ্ধ করেছিলেন, তাই বহুলভাবে এর পরিচিতি হয় Pascal's triangle বা পাসকাল-এর ত্রিভূজ নামে।
ব্লেজ পাসকাল-এর পান্ডুলিপি"
ইয়াং হুই-এর পান্ডুলিপি"
এবারে চলো আমরা এই ত্রিভূজের আরও কিছু রহস্য জেনে নিই। যদি এই ত্রিভূজের দ্বিতীয় সারির প্রথম বা শেষ '1' থেকে শুরু করে কোণাকুণি নীচের দিকে যেতে থাক, তাহলে দেখবে 1, 2, 3, 4, ... করে পরপর সংখ্যাগুলো পেয়ে যাচ্ছ।
সংখ্যাগুলো নিয়ে আরেকটু খেলা করে দেখা যাক। যদি প্রতি সারির সংখ্যাগুলি পাশাপাশি যোগ করি তাহলে কি দাঁড়ায় দেখা যাক। প্রথম সারিতে 1, দ্বিতীয় সারিতে 1+1=2, তৃতীয় সারিতে 1+2+1=4, চতুর্থ সারিতে 1+3+3+1=8, পঞ্চম সারিতে 1+4+6+4+1=16, এভাবে চলতে থাকবে। প্রতি সারির এই যোগফলগুলো 1, 2, 4, 8, 16, ... -এদের মধ্যে কোন সামঞ্জস্য লক্ষ্য করছ কি? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছ। প্রতি সারির যোগফল তার ঠিক আগের সারির যোগফলের 2 গুণ হয়ে যাচ্ছে। 1 এর পরে 2, 2 এর পর 4, 4 এর পর 8, ... এইভাবে।
"সারির যোগফল"
অবাক হচ্ছো আর বেশ মজা লাগছে তো! এবার তাহলে আরেক কাজ করো। যেকোন সারির প্রথম বা শেষ '1' থেকে শুরু করে কোণাকুণি নীচের দিকে যেতে থাক এবং এক জায়গায় এসে থামো। এই কোণাকুণি পথে যে সংখ্যাগুলো পেলে সেগুলো পরপর যোগ করলে যে সংখ্যাটা পাবে, সেই সংখ্যাটা আছে কোণাকুণি পথটার ঠিক নীচে, পথটা যে দিকে যাচ্ছিল তার বিপরীত দিকে। নীচের ছবিতে যেমন লাল রঙ দিয়ে দেখানো হয়েছে 1, 2, 3 যোগ করে পাওয়া যাচ্ছে 6, আবার নীল রঙ দিয়ে দেখানো হয়েছে যে 1, 3, 6, 10 যোগ করে পাওয়া যাচ্ছে 20 । তোমরা নিজেদের ইচ্ছেমত অন্য জায়গা থেকে শুরু করে, আর এই নিয়ম মেনে যতটা ইচ্ছে নীচের দিকে গিয়ে মিলিয়ে দেখতে পার।
"কোণাকুণি যোগফল"
এবারে আরেকটা আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করি। প্রতি সারিতে সংখ্যাগুলি পাশাপাশি রেখে যে বড় সংখ্যাগুলি পাবে, সেগুলি হল, প্রথম সারিতে 1, দ্বিতীয় সারিতে 11, তৃতীয় সারিতে 121, চতুর্থ সারিতে 1331, পঞ্চম সারিতে 14641 । এদের মধ্যে সামঞ্জস্য হল, 1 কে 11 দিয়ে গুণ করলে পাওয়া যায় 11, 11 কে 11 দিয়ে গুণ করলে পাওয়া যায় 121, 121 কে 11 দিয়ে গুণ করলে হয় 1331, 1331 কে 11 দিয়ে গুণ করলে হয় 14641 । অবাক হচ্ছো তো! তাহলে নিজেরাই একবার গুণ করে মিলিয়ে দেখ।
"11-এর মজার কথা"
মানে প্রতি সারিতে সংখ্যাগুলি তার ঠিক আগের সারির সংখ্যার 11 গুণ হয়ে যাচ্ছে। ষষ্ঠ সারি থেকে যেহেতু কোন কোন জায়গায় এক-digit এর থেকে বড় সংখ্যা থাকতে পারে, তাই শুধুমাত্র সংখ্যাগুলো পাশাপাশি বসিয়ে কিন্তু এই বৈশিষ্ট্যটা লক্ষ্য করা যাবে না। যেমন ধর, ষষ্ঠ সারিতে সংখ্যাগুলো পাশাপাশি বসিয়ে পাওয়া যায় 15101051 । এটা কিন্তু মোটেই আগের সারির 14641 আর 11 -এর গুণফল নয়। মজার খেলাটা মাঝপথে ভেঙ্গে যাওয়ায় কি একটু মন খারাপ হয়ে গেল? দাঁড়াও, আরেকটু সতর্ক হয়ে বড় সংখ্যাটা তৈরী করলে হয়তো এই সমস্যার সমাধান করা যাবে। নীচের ছবিতে সেটাই দেখিয়েছি।
দেখলে বুঝতে পারবে, ডানদিক থেকে শুরু করে 1, 5 -এর পর আমরা যখন 10 পেলাম, তখন তার শুধু 0 রেখে বাকি সংখ্যাটা অর্থাৎ 1 কে তার বাঁদিকের 10 এর সাথে যোগ করে পেলাম 11 । একইরকম ভাবে 11 -এর 1 কে রেখে দিয়ে বাকি 1 কে তার বাঁদিকের 5 এর সাথে যোগ করে পাওয়া গেল 6, আর সবশেষে পরে থাকল একদম বাঁদিকের 1 । এইভাবে যে সংখ্যাটা তৈরী হল সেটা হল তাহলে 161051, এবং আশ্চর্যজনকভাবে এটাই 14641 আর 11 এর গুণফল। এই নিয়ম পরের সারির সংখ্যাগুলোর উপর প্রয়োগ করে তুমি পেয়ে যাবে 1771561, যেটা নাকি 161051 আর 11 এর গুণফল! এবারে খুশি তো তাহলে?
যাক্, পাসকাল-এর ত্রিভূজের আরও রহস্যের কথা বলতে গেলে আজ আর কথা শেষ হবে না। দেখা গেছে যে গণিতের জ্যামিতি (geometry), ত্রিকোণমিতি (trigonometry), বীজগণিত (algebra) এবং calculus-এর বিভিন্ন জায়গায় পাসকাল-এর ত্রিভূজের ব্যবহার রয়েছে। দেখলে তো তাহলে কত সহজ একদল সংখ্যার মধ্যে কতরকম রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে! যখন উঁচু ক্লাসে উঠে গণিতের আরও কঠিন বিষয়গুলো আয়ত্ত করবে, তখন তুমি এর সাথে আরও পরিচিত হবে। আর তাহলে এখন থেকে এই মজার ব্যাপারগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেই দেখবে সব কিছু আরও অনেক উপভোগ্য মনে হচ্ছে।
লেখাঃ
পাভেল ঘোষ
টেম্প, আরিজোনা
ছবিঃ
পাভেল ঘোষ
উইকিপিডিয়া
- বিস্তারিত
- লিখেছেন পাভেল ঘোষ
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
কলকাতায় প্রথম যুগের সিনেমা
(গত সংখ্যার পর)
গত সংখ্যায় তো বলেছিলাম কিভবে ম্যাডান থিয়েটার হয়ে উঠেছিল কলকাতার প্রথম বায়োস্কোপ কোম্পানি, এবং বানিয়েছিলেন প্রথম কাহিনীচিত্র 'সত্যবাদী রাজা হরিশ্চন্দ্র'।
ম্যাডানরা দুবছর বাদে আরো বড় ছবি বানালেন, নাম 'বিল্বমঙ্গল'। এই ছবি এমনকি বাংলার সুদূর বরিশাল শহরেও দেখানো হয়েছিল। বাংলার পূবদিকে ( তখনও বঙ্গভঙ্গ হয়নি) ১৮৯৮ সালে ২৮শে এপ্রিল, ভোলার এস ডি ও বাংলোয় প্রথম ছবি দেখান হীরালাল সেন। তার কয়েকদিন পরেই ঢাকার ক্রাউন থিয়েটারে কলকাতার ব্রেডফোর্ড কোম্পানি জনসাধারনের জন্য কয়েকটি ছবি দেখান।
বিল্বমঙ্গল ছবির বিজ্ঞাপন
সে যুগের প্রযোজকদের ছবি, বিশেষভাবে ম্যাডানদের ছবি সিনেমার বানানোর নানা ঘরানার এক ধরনের অগোছালো মেলামেশা ছিল। চিত্রনাট্য তেমন কিছু থাকত না। ক্যামেরাম্যান ছিলেন সর্বেসর্বা।যেমন তেমন করে মাস চারেকের মধ্যে শেষ করে দেওয়া হত একেকটা 'বই' । সিনেমা সম্পর্কে ম্যাডানদের কি ধারনা ছিল বোঝা যায় যখন দেখি তাদের প্রথম দুজন পরিচালক ছিলেন তাদেরই প্রতিষ্ঠান এর টাইপিস্ট প্রিয়নাথ গাঙ্গুলি আর অ্যাকাউন্ট্যান্ট জ্যোতিষ বন্দোপাধ্যায়। ম্যাডান কোম্পানির অভিনেতা অভিনেত্রীরা আসতেন পেশাদার রংগমঞ্চ ও কলকাতার অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সমাজ থেকে।তখন তো সিনেমা তে শব্দ ছিল না; তাই বাংলা বলার কোন দায় ছিল না। যেজন্য সীতা দেবী (নীনা স্মিথ) বা ইন্দ্রা দেবী ( এফী হিপ্পোলেট) - এই দুজন দেশি মেমসাহেব হয়ে উঠেছিলেন আমাদের প্রধান নায়িকা। সঙ্গে ছিলেন দানীবাবু, দুর্গাদাসবাবু বা নির্মলেন্দু লাহিড়ী, যাঁরা সবাই আদতে নাট্য অভিনেতা ছিলেন। স্বনামধন্য নাট্য ব্যক্তিত্ব শিশির কুমার ভাদুড়ী যে চলচ্চিত্র জগতে আশে, তাও কিন্তু মূলতঃ ম্যাডানদের অবদান।
শিশির কুমার ভাদুড়ি (বাঁদিকে)
কলকাতার ছবি, আমার মনে হয়, প্রথম একটু ছবি হয়ে উঠল, যখন ধীরেন গাঙ্গুলি মশাই 'বিলেত ফেরত' বা 'England Returned' নামে ছবিটিতে অভিনয় করলেন। সারা দেশই তখন ইংরেজদের সম্পর্কে বিরূপ ধারণ পোষণ করছে। ধীরেন গাঙ্গুলি ছিলেন শান্তিনিকেতনের ছাত্র এবং সূদূর হায়দ্রাবাদের নিজাম কলেজে কলা শিক্ষকতা করতেন। তাই তাঁর তৈরি করা ছবিতে একটু অন্যরকম ভাবনা চিন্তা এল। তিনি তাঁর ছবিতে নকল সাহেবদের ঠাট্টা করার সাহস দেখালেন। নিরস তথ্য বা পুরাণের মহিমা নয়, বললেন চোখে দেখা জীবনের গল্প। তাই এই ছবিটি অসম্ভব জনপ্রিয় হল।
ধীরেন বসু
ক্রমশঃই ছবির জগতে ভীড় বাড়তে থাকে। ১৯২২ সালে বছরে ১৫টি ছবি তৈরি হয়। আরেকটা হিসাব দেখায়, টাকাপয়সার অসুবিধা থাকা সত্বেও ১৯৩০ সালে ২২টি ছবি তৈরি হয়। বাঙালি প্রযোজকদের সঙ্খ্যাও ক্রমশঃ বাড়ছে। ইতিমধ্যেই অনাদি বসু তৈরি করেছিলেন বিখ্যাত অরোরা স্টুডিও। ১৯৩৬ সালের আগে অরোরার নিজস্ব স্টুডিও ছিল না। কিন্তু তা সত্বেও তারা ম্যাডান কোম্পানির সাথে পাল্লা দিয়ে তথ্যচিত্র বানিয়ে গিয়েছেন। এরা কংগ্রেস অধিবেশন এর দৃশ্য, রবীন্দ্রনাথ ও সুভাষচন্দ্রের বক্তৃতার প্রামাণ্য নথিচিত্র বানিয়ে বেশ হইচই ফেলে দিয়েছিলেন।
ইতিমধ্যে হায়দ্রাবাদের পাট চুকিয়ে ধীরেন গাঙ্গুলি কলকাতায় ফিরে এসেছিলেন। হ্যারিসন রোডের ফুটপাথে তিনি একজন শিক্ষিত ছেলেকে গামছা বিক্রি করতে দেখে উতসুক হয়ে জানলেন যে সে গান্ধীজীর অসহযোগ মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়েই এমন স্বদেশী পেশা বেছে নিয়েছে। এই যুবকটিকে তিনি নবগঠিত বৃটীশ ডোমিনিয়ন ফিল্ম কোম্পানিতে সু্যোগ দিলেন। রাজপুতানার জহরব্রতের আদর্শে অনুপ্রাণিত 'ফ্লেইম্স্ অফ ফ্লেশ' তাঁরই চিত্রনাট্য। তিনিই বাংলার প্রথম স্বকীয়তায় ঝলমলে পরিচালক- দেবকী কুমার বসু। তার কিছুদিন পরেই এই কোম্পানি খুঁজে বার করেন বাংলা ছবির জগতের আরেক তারকা- প্রমথেশ বড়ুয়াকে।
সেইসব গল্প আগামি সংখ্যায়।
অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
চলচ্চিত্র বিদ্যা বিভাগ
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
শিল্পের ইউরোপ -পর্ব ১
প্রথমেই বলে রাখি যে, আমার এই লেখা ইউরোপের শিল্পের ইতিহাস বর্ণনা নয়, বা ইউরোপের নামী শিল্পীদের কোনো কাহিনীও নয়। ইউনাটেড কিংডামে কাটানোর সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায়ে বেড়াতে গেছি। ছোটোবেলা থেকেই শিল্পের দিকে একটা টান ছিল। এক কাকুর কাছে আঁকা শিখেছিলাম কদিন, সেইখানে কাকুর অনেক বই দেখতাম, কত বিখ্যাত বিদেশি শিল্পীর আঁকা দেখে মুগ্ধ হতাম। এখন ভেবে রোমাঞ্চ হয় যে তার মধ্যে বেশ কিছু ছবি, ভাস্কর্য্য আমি সামনে থেকে দেখে এসেছি। তেমনি কিছু স্মৃতি কিছু ছবি নিয়ে আমার এই ফটো ফিচার।
এই পর্বে রয়েছে ইউনাটেড কিংডামের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা, খ্রীষ্ট পূর্ব থেকে অদূর অতীতের শিল্পের কিছু নিদর্শন নিয়ে আমার এই ছবির ডালি।
১) রোমানরা ইংল্যান্ডে আসে খ্রীষ্ট পূর্ব সময়ে। দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ড-এর “বাথ” শহর আজ ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। ঠান্ডার দেশে এসে এই জায়গাতেই রোমানরা খুঁজে পেয়েছিল উষ্ণ প্রস্রবন, আর গরম জলের উৎস আর অ্যাভন নদীর পাশেই গড়ে তুলেছিল এই অসাধারণ শহর।
একটা গোটা শহর জুড়ে শিল্পের এরকম ছড়াছড়ি সারা বিশ্বে বিরল। ওখানকার মিউসিয়ামে রাখা আছে দুই শহস্রাব্দ আগেকার খুজে পাওয়া রোমান শিল্প।
২০০০ বছরেরও বেশী পুরোনো ব্রোঞ্জের তৈরী দেবী মিনার্ভা-র মস্তকের এই ভাস্কর্য রাখা আছে সেই মিউসিইয়ামে।
২) “গর্গন” - গ্রীক রূপকথায়ে ভয়ঙ্কর তিন বোনের গল্প আছে, স্থেনো, ইউরায়েল আর মেডুসা। সেই রূপকথারই অঙ্গ “গর্গন্স হেড” বা গর্গনের মস্তকের এক সুপ্রাচীন ভাস্কর্য রাখা আছে বাথ মিউসিয়ামে। সেই ভাস্কর্যেরই ছবি তোলার সুযোগ পেয়েছিলাম আমার রোমান বাথ ভ্রমণে।
৩) প্রাচীন গ্রীক গ্রন্থকার হোমার লিখেছিলেন ঘোড়ার তথা সমুদ্রের দেবতা পসেইডন রথে চড়ে সাগরের ওপর দিয়ে যেতেন। পসেইডনের সেই রথ টেনে নিয়ে যেত সামুদ্রিক ঘোড়া “হিপোক্যাম্পি”।
সেই হিপোক্যাম্পি-র এক মোসেক চিত্র এই ছবিতে আমরা দেখতে পাই। কোনো এক সময়ে এটি এক রোমান প্রাসাদের মেঝেতে শোভা পেত। অসাধারণ এই শিল্পকীর্তির স্রষ্টা কে তা কেউ জানবে না। কিন্তু তার শিল্প অমর হয়ে থাকল যুগ যুগান্ত ধরে। এই ছবি রোমান বাথ মিউসিয়ামে তোলা।
৪) লন্ডনের পিকাডেলি সার্কাস এক বিখ্যাত ও উল্লেখযোগ্য জায়গা, যে কোনো ভ্রমণকারীর অবশ্য গন্তব্য। কলকাতার শ্যামবাজারের মোড়ের মতন এটাও বিভিন্ন রাস্তার সংগমস্থল। এই সংগমস্থলেই,লর্ড শাফট্সবেরীর স্মৃতিতে, ১৮৯২ সালে নির্মান করা হল “শাফট্সবেরী মনুমেন্ট মেমোরিয়াল ফাউন্টেন”। সেই ফোয়ারার চূড়ায়ে গ্রীক প্রেমের দেবতা “ইরস”-এর ভাই “অ্যান্টেরস”-এর এই কিংবদন্তী মূর্তি নির্মান করেন শিল্পী অ্যালফ্রেড গিলবার্ট। এই মর্তি পৃথিবীর সর্বপ্রথম ভাস্কর্য যা অ্যালুমিনিয়াম কাস্টে নির্মিত এবং সেই দিক থেকে এক যুগান্তকারী শিল্প। সর্বসাধারনের সামনে রাখার জন্যে তখনকার যুগে এই নগ্ন মূর্তি নিয়ে বিতর্ক তৈরী হলেও জনসাধারণ একে গ্রহন করে। একে অনেকে “দি এঞ্জেল অফ খ্রীসচান চ্যারিটি” বলে সম্বোধন করেন।
৫) লন্ডনে গেলে রানীর বাড়ি দেখতে সবাই যাবেই। রানী থাকেন বাকিংহাম প্যালেসে। প্রয়াত রানী ভিক্টোরিয়ার মেমোরিয়াল তৈরী হয়েছিল ১৯১১ সালে ঠিক বাকিংহাম প্যালেসের সামনে।
এই সোনালি মুর্তির নাম “এঞ্জেল অফ ভিক্টরি” যা অবস্থিত এই মেমোরিয়ালের চুড়া হিসেবে। শিল্পী সার থমাস ব্রোক এই মেমোরিয়াল তৈরী করেন।
৬) “ট্রাফেলগার স্কোয়ার”। মধ্য লন্ডনের এই জায়গা সারা পৃথিবীর পর্যটক এক নামে চেনে। বিশ্বের সব থেকে বিখ্যাত “স্কোয়ার” গুলোর মধ্যে অন্যতম। সেখানকারই বিখ্যাত ফোয়ারার একাংশ আমাকে আকর্ষণ করেছিল খুব বেশি। সেই ছবি তুলেছিলাম যা মনে ধরেছিল। পাথরের গায়ে সঙ্গীতের ছোঁয়া রয়েছে এই শিল্প কীর্তির মধ্যে।
৭) “ক্যসেল কখ্” - কার্ডিফ। কাঠের তৈরী এই আসাধারণ ঝাড় লন্ঠন এক কথায়ে অনবদ্য। কোনও এক অজানা শিল্পীর এই অপূর্ব সুন্দর সৃষ্টি এখন সমান মন কাড়ে।
৮) কার্ডিফের সেন্ট ফ্যাগান্স মিউসিয়ামে রাখা আছে ওয়েল্স্ দেশের বিভিন্ন সুপ্রাচীন অখ্যাত শিল্প। এই প্রস্তর মূর্তি জীবন্ত হয়ে আছে মেঘাবৃত ইউনাইটেড কিংডামের আকাশের নীচে।
৯) "মার্চেন্ট সীফেয়ারার’স ওয়ার মেমরিয়াল"। খুব আধুনিক এই বিরাট ধাতব শিল্পকীর্তি তৈরী হয় ১৯৯৭ সালে। যে সব যোদ্ধারা কার্ডিফ এবং পেনার্থ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেরিয়ে আর কোনোদিন ফিরে আসেনি, তাদের স্মৃতির উদ্দেশেই এখানে আছে "ওয়ার মেমোরিয়াল"। বিকেলের পড়ন্ত রোদে এই শায়িত মস্তক সেই সৈনিকদের করুণ অবস্থার স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।
১০) ইউনাটেড কিংডামের অনেক জায়গাতেই দেখেছি, অতি সাধারণ বস্তুকে অসাধারণ কি করে বানানো যায়ে। কোনো এক গাছের গুড়ি কেটে খোদাই করে এরকম অসামান্য বেঞ্চ বানানো যায়ে তা দেখে মন ভরে গেছিল। ৩০০ বছর ধরে শাষিত-শোষিত হবার পরেও এই ইংরেজ জাতের প্রতি এক সম্মান জেগে ওঠে। এখানে এখনও শিল্প বেঁচে আছে এবং এখানকার মানুষ তার যোগ্য মর্যাদা দিয়েছে।
লেখা ও ছবিঃ
ঋতম ব্যানার্জী
কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন ঋতম ব্যানার্জি
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত