দৈত্য ক্যাক্টাসদের দেশে
এবারে আমার লেখা পাঠাতে দেরী হোলো। হঠাৎ জরুরী কাজে আমাদের ১৪০০ মাইল দূরে যেতে হলো। ফিরে আসার সময় পিউ আর আমি একটা দোকানে বাজার করছিলাম – সেই দোকানে দেখলাম মনসা গাছের পাতা বিক্রি হচ্ছে। লোকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। কাঁটা সহ মনসা পাতা – সেই পাতা কিভাবে রান্না করে খাওয়া যায় আমরা তো ভেবেই পেলাম না। তাই ভাবলাম তোমার কাছে জানতে চাই। জানো তুমি? কি ভাবে রান্না করে মনসা পাতা?
মনসা গাছের কথায় বলি পিউ আর আমি গেছিলাম একটা জায়গায় যেখানে ৫০ ফুট উঁচু মনসা গাছ আছে! অবাক হলে? সেই যায়গায় ৩০ থেকে ৫০ ফুট মনসা গাছে ভরা। গাছের কাঁটা ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা। জায়গাটা মরুভূমি। নাম সোনোরান মরুভূমি। আমেরিকার দক্ষিন-পশিচম প্রান্তে। অ্যারিজোনা প্রদেশে। সাগুয়ারো ন্যাশনাল পার্ক। সারা পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র সোনোরান মরুভূমিতেই জন্মায় এই ধরনের ক্যাকটাস গাছ।
সোনোরান মরুভূমিতে অনেক ধরনের ক্যাকটাস গাছ আছে। তবে সাগুয়ারো হল বিখ্যাত। এদের কিছু গাছের বয়স ১৫০ বছরেরো বেশী। সাগুয়ারো ক্যাকটাস এর একটা শাখা বড় হতে ৭৫ বছর লেগে যায়। বিশেষত বসন্ত কালে এই গাছ খুব সুন্দর লাগে। সে সময় গাছে ফুল আসে, সাদা ফুলে গাছের ডগা গুলো ভোরে যায়। যেদিকে চোখ যায় চারিদিক বড় বড় ক্যাকটাস গাছে ভরা – আর গাছের ডগা ফুলে ভরতি। মৌমাছি উড়ে উড়ে মধু খাচ্ছে। সে এক দেখবার মতো জায়গা।
যেদিকে দু চোখ যায় সব যায়গায় শুধু ক্যাকটাস গাছে ভরা। গাছের ডালে পাখিরা গর্ত করে বাসা বানায়। জানো কি ক্যাকটাস গাছের বয়স হিসাব করা খুব মুস্কিল, যদি না জানা থাকে কবে গাছটা বসানো হয়েছে। কারন ক্যাকটাস গাছেতে অন্যান্য গাছের মত কোনো ring থাকে না যাতে বয়স গোনা যাবে। নিচের ছবিতে একটা উদাহরণ দেওয়া আছে – যাতে আন্দাজ করা যায় সাগুয়ারো ক্যাকটাস এর বয়স।
বসন্ত কালে ক্যাকটাস গাছে ফুল আসে। ঐ অঞ্চলে আরো অন্য অন্য ক্যাকটাস গাছ ও আছে। ছোলা ক্যাকটাস, প্রিকলী পেয়ার, অরগ্যান পাইপ, ব্যারেল ক্যাকটাস। নিচে দুটো ছবি দিলাম।
আমরা ছবি তোলার জন্য সময় সময় রাস্তা থেকে সরে গিয়ে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকেছিলাম। আমাদের প্যান্ট ক্যাকটাস এর কাঁটাতে ভরে গেছিল। কাঁটা বার করতে আমাদের নাজেহাল অবস্থা।
লেখা ও ছবিঃ
দেবাশীষ পাল
রচেস্টার, নিউ ইয়র্ক, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র
সাগুয়ারো ন্যাশনাল পার্ক সম্পর্কে আরো জানতে হলে দেখতে পারো এই লিঙ্কটি।
গাছের বয়স-উচ্চতা তালিকাটি নেওয়া হয়েছে এই লিঙ্ক থেকে।
- বিস্তারিত
- লিখেছেন দেবাশীষ পাল
- ক্যাটfগরি: দেশে-বিদেশে
জয়পুর-গোলাপী শহর
জয়পুর থেকে ফিরছি ইতিহাসের ঘ্রাণ নিয়ে আর মনের মাঝে জেগে আছে গোলাপী শহর, যেখানে কথা বলে ওঠে প্রতিটি প্রাসাদ,দুর্গ,পাথর,চিত্রকলা।
কি বলে জানো? বলে বহুদিন আগের নানা গল্প; তখন আমাদের পৃথিবীটা অন্যরকম ছিল, দেশটাও।
দিল্লী থেকে ট্রেনে জয়পুর যেতে সময় লাগে পাঁচ ঘন্টা।সকাল ছটায় রওনা হয়ে সকাল এগারোটায় পৌঁছে গেলাম জয়পুর,রাজস্থানের রাজধানী যাকে ‘পিঙ্ক সিটি’ বা ‘গোলাপী শহর’ বলা হয়।
গোলাপী শহর
এই শহর টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহারাজ সওয়াই জয়সিং।‘সওয়াই’ শব্দের অর্থ এক এবং এক চতুর্থাংশ।যিনি সাধারণের থেকে সব দিক দিয়ে এক চতুর্থাংশ বেশি এমন প্রতিভাসম্পন্ন রাজাই পেতেন ‘সওয়াই’ উপাধি।
মহারাজ সওয়াই জয়সিং
অনেক কিছু দ্রষ্টব্য জয়পুরে; আমরা শুরু করলাম ‘অ্যালবার্ট হল্ মিউজিয়াম’ দিয়ে।
রামনিবাস বাগ
মিউজিয়াম টি রামনিবাস বাগে অবস্থিত।যেটি নির্মিত হয়েছিল সওয়াই দ্বিতীয় রামসিং দ্বারা।সুইনটন জেকব নামে প্রযুক্তিবিদ এটিকে রূপদান করেন।১৮৮৭ সালে এটি সাধারণের জন্য খোলা হয়।মিউজিয়াম টির স্থাপত্যশৈলী সুন্দর।এখানে রাজাদের ব্যবহৃত বহু দ্রব্যসামগ্রী সযত্নে রাখা আছে।
বিভিন্ন রকম অস্ত্রশস্ত্র,তীর ধনুক,ছুরি,বন্দুক
নানারকম বাদ্যযন্ত্র রাজকীয় পোশাক পরিচ্ছদ,অনেক পুঁথিপত্র,রাজস্থানী চিত্রকলা।
এর থেকে বোঝা যায় রাজারা গান ও ছবি খুব ভালবাসতেন।একটি ইজিপশিয়ান মমির ও দেখা মিলল এখানে।চৈনিক বৌদ্ধ ও রামায়ন মহাভারতের নানা গল্প এখানে রাখা চিত্র ও মূর্তিগুলিতে ধরা পড়ে।
চৈনিক বৌদ্ধ চিত্রকলা
রামায়ণের বানী
আমার সবচেয়ে মজা হয়েছে প্রচুর পায়রা দেখে।
পায়রা
গাছের এডালে ওডালে লাফিয়ে বেড়াচ্ছিল দুষ্টু কাঠবেড়ালী, যেন পুটুস পাটুস চোখে আমাদের ওখানেই থেকে যাওয়ার অনুরোধ করছিল।তবে আমাদের যে যেতে হবে আর এক অভিযানে।এবার গন্তব্য অম্বর দূর্গ(স্থানীয় ভাষায় আমের)।
আধ ঘন্টায় পৌঁছে গেলাম সেখানে।এটি একটি গিরিদুর্গ।ঘুরে ঘুরে পথ গেছে সেখানে।খুব উত্তেজনা আর আনন্দ হচ্ছিল মনে,যেন বইয়ে পড়া কোনো রূপকথার গল্প আস্তে আস্তে জীবন্ত হয়ে উঠছে আর এইমাত্র ধরা দেবে চোখের সামনে।আর হলও তাই !
অম্বর দূর্গ
আমার নতমস্তক হয়ে শত শত বার প্রনাম জানাতে ইচ্ছে করছিল ঐ রাজাদের,আর নিজেকে সত্যিই ধন্য মনে হচ্ছিল এই ভারতের এই পুণ্য ভুমিতে আমার জন্ম এই ভেবে।
দূর্গ থেকে নিচের দৃশ্য অভাবনীয় সুন্দর।
কত যুদ্ধ, বিগ্রহ,রাজ্যপাট আর ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে এই দূর্গগুলি।সেই কীর্তিমান রাজারা আজ নেই,কিন্তু এখানে প্রতিটা ইঁটপাথরে কান পাতলে শোনা যাবে তরোয়ালের ঝনঝনা,ঘোড়া ও হাতিদের সগর্ব আস্ফালন্।তাই তো বললাম,এখানে ইতিহাস কথা বলে।
দুর্গের মাথায় বসেছিল অনেক হনুমান,এত জনমানবে তাদের ভয়ডর নেই;তারাও বেশ রাজকীয় মেজাজে মনের সুখে সুস্বাদু গাঁদাফুল ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছিল,যেন কোনো লোভনীয় মিঠাই খাচ্ছে।
শিসমহলের কারুকার্য দেখে মুগ্ধ হলাম।
আমের দুর্গের মধ্যেই আছে মানসিং মহল।
দ্বিতীয় দিন গেলাম জয়গড় কেল্লা দেখতে।সেটি আমের কেল্লাটির থেকেও ওপরে। কেল্লাটি বানিয়েছিলেন মহারাজ জয়সিং।এটি মূলত সৈন্যদের জন্য বানানো।
মহারাজ জয়সিং একটি কামান নির্মাণ করান যার নাম জয়বান।
এরপর আমরা চড়লাম উটের পিঠে।দেখ কি সুন্দর মুখ তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
দেখলাম সওয়াই প্রতাপ সিং এর তৈরী জলমহল,যেটি মানসাগর সরোবরে স্থিত।গ্রীষ্মকালে একটু শীতল পরিবেশে থাকার জন্যই এটি নির্মিত হয়।
শুনলাম রাজস্থানী বাদ্যযন্ত্রে সঙ্গীত।
মহারাজ মাধো সিং যখন ১৯০২ সালে ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন তখন বিশালকায় দুটি রৌপ্যপাত্রে গঙ্গাজল নিয়ে গিয়েছিলেন।
তৃতীয় দিন দেখলাম রাজা সওয়াই জয়সিং এর তৈরী যন্তরমন্তর।সূর্যের উত্তরায়ন ও দক্ষিনায়ন দেখার জন্য নাড়ীবলয়।‘বৃহৎ সম্রাট যন্ত্র’ নামে সবথেকে বড় সূর্যঘড়ি।
গণেশ মন্দিরে গিয়ে গণেশজীকে প্রনাম করে দেখে এলাম বিড়লা মন্দির।রাতে চৌকিধানী গিয়ে দেখলাম রাজস্থানী নৃত্য।
দড়ির ওপর খেলা বাইস্কোপ আর পুতুল নাচে ছোটোবেলাকে আবার ফিরে পেলাম।
তিন রকম রুটি ও নানারকম মন মাতানো পদের রাজস্থানী থালি আহারে মন ভরে গেল।
এবার ফেরার পালা।পরেরদিন সকালে ট্রেন। তাই তোমাকেও বলি,যাও নিজের চোখে দেখে এসো ইতিহাস কে।দেখবে সে কখন তোমার বন্ধু হয়ে গেছে।
দ্বৈতা গোস্বামী
গুরগাঁও, হরিয়ানা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী
- ক্যাটfগরি: দেশে-বিদেশে