![মামার বাড়ি বেড়াতে যাওয়া](/images/eso-gawlpo-likhi/aishani-basu-thakur-story-skgccl.jpg)
দুজন ছোট ছেলে ছিল। তারা তাদের বাবা-মায়ের সাথে থাকত। তাদের স্কুলের গরমের ছুটি পড়েছে তাই তারা ভাবলো যে তারা মা বাবার সাথে কথা বলে তাদের মামার বাড়ি বেড়াতে যাবে। তারা তাড়াতাড়ি মা-বাবাকে কথাটা বলতে ছুটে গেল । মাকে দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি তারা ছুটে গেল। মাকে বলল” মা তুমি আমাদের একটু গরমের ছুটির সময় বেড়াতে নিয়ে ? “ তখন তাদের মা বললেন “এই গরমের মধ্যে কোথায় বেড়াতে নিয়ে যাব একটু বলবি? “ তখন তার উত্তরে তারা বলল “মামারবাড়িতে”। সেই কথা শুনে তাদের মা বললেন “নারে আমি তোদের মামার বাড়ি নিয়ে যেতে পারব না। ওখানে খুব গরম এবং ওই জায়গাটা গ্রামের মতো। পাখা ঠিক মত চলে না আলো তো দূরের কথা” । তার উত্তর বড় ভাই বলল “আমরা না হয় একটু গরম সহ্য করেই থাকবো, আমাদের গরম লাগবে না”। তার কথা শুনে তার ছোটভাই ও “হ্যাঁ” বলল ।এদের কথা শুনে তাদের মা খুব রেগে গেলেন এবং বকা দিলেন! এত চিৎকার শুনে তাদের বাবাও ছুটে এলেন । এসে বললেন “কী হলো ।তোমরা এত চিৎকার করছো কেন? “তাদের মা বললেন “তোমার ছেলেরা এই গরমে মামার বাড়ি যাওয়ার জন্য খুব উৎপাত করছে ।আমি ওদের এত করে বলেছি যে যাওয়া সম্ভব নয় তাও , আমার কোন কথা শুনছে না “। তখন তাদের বাবা বললেন তা এত যখন যাওয়ার জন্য বলছে তাহলে কাল বা কিছুদিন পর নিয়ে গেলেই হয় । তখন মা বললেন “না ওদের ওখানে গেলে গরম লাগবে। ওখানে রোদের তাপ খুব বেশি ।পাখা আলো কোনটাই ঠিক মতো চলে না। তখন তাদের বাবা বললেন “আমি ওদের জন্য হাতপাখা কিনে নিয়ে যাব তাহলে যাবে তো ?” তখন তাদের মা বললেন ঠিক আছে তাহলে নিয়ে যাব কিন্তু ওখানে গিয়ে তোরা কোন দুষ্টুমি করবি নাতো? তখন তারা বলল না মা আমরা খুব শান্ত হয়ে থাকবো। একটুও দুষ্টুমি করবো না। তখন তাদের উত্তরে মা বললেন বেশ তাহলে মামার বাড়ি নিয়ে যাব। আনন্দে ছেলে দুটির মন ভরে গেল। পরের দিন তারা জিনিসপত্র জামাকাপড় সব গুছিয়ে নিল এবং বিকেলের দিকে ট্রেনের স্টেশনের দিকে গাড়ি করে একসাথে এগোতে লাগলো ।স্টেশনে পৌঁছে গিয়ে তারা ট্রেন ধরল। পরের দিন সকাল বেলা তারা যেই স্টেশনে নামার কথা সেই স্টেশনে পৌঁছে গেল। ট্রেন থেকে নেমে একটা অটো করে তারা মামার বাড়ি পৌঁছে গেল। বাড়িতে ঢুকেই তাদের মা বলল এই বাড়িতে তোদের মামা আর দিদা থাকেন। মা গিয়ে সবার সঙ্গে দেখা করে আয়। তারা প্রথমেই মামার সঙ্গে দেখা করতে গেল। তারপর দিদার সঙ্গে দেখা করতে দিদা বললেন তোরা কেমন আছিস? তোদের সঙ্গে সেই ছোটবেলায় দেখা করতে গিয়েছিলাম। তোদের কি সেসব মনে আছে? তারা বলল হ্যাঁ। তুমি কেমন আছো দিদা আমরা তো ভালোই আছি। তখন দিদা বললেন আমিও ভালো আছি। তারপর তিনি বললেন যাই গিয়ে তোদের স্নানের জল তৈরি করি। এই বলে তিনি স্নানের জল করতে চলে গেলেন। সবার স্নান হয়ে গেলে দিদার সবার জন্য রান্না করেন। তারপর তাদের মা খাওয়ার জন্য ডাক দিয়ে বলেন এই তোরা খেতে আয়। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। তারা ছুটে এসে দেখে যে ওদের থালাগুলো মাটিতে রাখা আছে !সেই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে গিয়ে তারা বলে থালাগুলো মাটিতে কেন রাখা আছে? আমরা তো বাড়িতে টেবিলে খাই । তখন তাদের দিদা বললেন এখানে তো আমরা ছোট থেকেই এইভাবে খেয়ে এসেছি। তখনই তারা মা কে জিজ্ঞেস করলেন এবং মা বললেন হ্যাঁ খাওয়া -দাওয়া হয়ে যাওয়ার পর তারা মাঠে গিয়ে খেলাধুলো করল। যেই একটু সন্ধ্যে হয়েছে এবং চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেছে তারা চিৎকার করে বাড়িতে ভূত এসেছে ভূত এসেছে বলতে বলতে ছুটে গেল। এমন সময় ঘরের আলো জ্বলা বন্ধ হয়ে গেছে। তারা আরো ভয় পেয়ে আতঙ্কে শুয়ে বলছে বাইরেও ভূত, ঘরের মধ্যে ভূত,সবদিকেই ভূত! মা আমাদের বাড়ি নিয়ে চলো! ‘এক্ষণি বাড়ি নিয়ে চলো !আমাদের খুব ভয় করছে! তখন মা বললেন আমি এই কারণেই তোদের আনতে চাইনি। ছেলেরাই একই কথা সারারাত ভয় বলে যাচ্ছে এবং তাদের মায়ের খুব বিরক্তি হচ্ছে । এই ভাবে তিনদিন তারা সকালে ভালো থাকছে আবার ঠিক রাতের দিকে ভয় পাচ্ছে। তৃতীয় দিন রাতে বাবা-মা কথা বলে ভাবলেন যে তারা পরের দিনই ছেলেদের নিয়ে বেরিয়ে যাবেন। সকালে উঠিয়ে ছেলে দের তৈরি হয়ে নিতে । তারা কাঁদতে কাঁদতে বলল, কেন এইতো কদিন আগেই এলাম !আজই চলে যাব? তখন মা বললেন সারারাত যা বিরক্ত করলি তাতে কারোর ভালো ঘুম হয়নি। তাই আজ নিয়ে যাব তোদের বাড়িতে ।তারপর ছেলেদের কান দুটো ধরে টানতে টানতে নিয়ে ট্রেন স্টেশনে পৌঁছে গেলেন ।পরের দিন তারা আবার নিজেদের বাড়িতে পৌঁছে গেল।
আমার কথাঃ
আমার নাম ঐশানি বসু ঠাকুর। আমি গার্ডেন হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। আমার নাচ করতে, ছবি আঁকতে, গল্প পড়তে এবং গল্প লিখতে ভালো লাগে। আমি আজ পর্যন্ত বাংলা গল্পের বইয়ের মধ্যে 'আম আঁটির ভেঁপু', 'ঈশপের গল্প', 'ঠাকুরমার ঝুলি' ,'ছোটদের রামায়ণ' পড়েছি।
ছবিঃ পিক্সাবে