বোৎসোয়ানা
আগেরবার আলাপ করেছিলাম দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনার সঙ্গে, এবারে চলো অন্য একটা মহাদেশে যাই। আফ্রিকার একটা 'ল্যান্ডলক্ড কান্ট্রি', অর্থাৎ চারপাশে স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা দেশ বোৎসোয়ানা। আজ চলো এই দেশটির নানা জানা অজানা কথা খুঁজে আনার চেষ্টা করি আমরা।
ব্রিটিশ শাসনে থাকার সময়ের স্ট্যাম্প
১৯৬৬ সালে স্বাধীনতা লাভের আগে অব্দি এই অঞ্চল ছিল ব্রিটিশ শাসনাধীন, নাম ছিল বেৎসোয়ানাল্যান্ড প্রটেক্টরেট (Bechuanaland Protectorate)।
আফ্রিকার মধ্যে বোৎসোয়ানার অবস্থান
দক্ষিণ আর দক্ষিণ-পূর্বে দক্ষিণ আফ্রিকা, পশ্চিম আর উত্তরে নামিবিয়া, উত্তর-পূর্বে জিম্বাবোয়ে, উত্তরে জাম্বিয়া, এই হল বোৎসোয়ানার সীমানা। পুরোপুরি সমতল দেশটির প্রায় সত্তর শতাংশ এলাকা কালাহারি মরুভূমির অন্তর্গত।
কালাহারি মরুভূমি
জনঘনত্বের বিচারে আমাদের দেশের তুলনায় বোৎসোয়ানার অবস্থানটা বেশ মজার, ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ, আর এই ব্যাপারে বোৎসোয়ানার র্যাঙ্ক ১৪৫। সবচেয়ে কম জনবহুল দেশগুলোর মধ্যে একটি হল এই দেশ।
এবার একটু ভূগোল পড়ব, নাকি?
ওকাভ্যাঙ্গো ব-দ্বীপ অঞ্চল
দেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ওকাভ্যাঙ্গো (Okavango) ব-দ্বীপ বিশ্বের বৃহত্তম অন্তর্দেশীয় (Inland) ব-দ্বীপগুলোর মধ্যে একটা। উত্তরদিকে রয়েছে মাকগাডিকগাডি (Makgadikgadi) নামে একটি বিশাল সল্ট প্যান। লিম্পোপো নদীর অববাহিকা বোৎসোয়ানার বেশ কিছুটা জুড়ে রয়েছে। কেবল বোৎসোয়ানা নয়, আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের অনেকটা এলাকাই এই নদীর অববাহিকার অন্তর্গত। লিম্পোপো নদীর আবার অনেকগুলো উপনদী শাখানদী আছে, তাদের মধ্যে দেশের জল সরবরাহে নোৎওয়ানে (Notwane), চোবে (Chobe) ইত্যাদিদের ভূমিকা বেশ উল্লেখযোগ্য। চোবে(Chobe) দেশের উত্তরে নামিবিয়ার জাম্বেজি (Zambezi) নদীর সঙ্গে মিশেছে কাজুঙ্গুলা (Kazungula) বলে একটা জায়গায়, এই কাজুঙ্গুলা শহরটি ছোট্ট হলেও বেজায় রাশভারি , কারণ জাম্বিয়া, বোৎসোয়ানা, জিম্বাবোয়ে, নামিবিয়া - চার চারটে দেশের সীমানা নির্দেশ করে এই শহর।
স্যাটেলাইট থেকে নেওয়া ছবিতে দেখা যায় বাঁদিকে ঝাঁটার মত ওকাভ্যাঙ্গো ব-দ্বীপ অঞ্চল, আর পাশে মাকগাডিকগাডি সল্ট প্যান
বন্যপ্রাণীঃ
চোবে ন্যাশনাল পার্ক-এ হাতির দল
আফ্রিকার দেশ, বন্যপ্রাণী নিয়ে কথা হবে না, তাই কি আর হয়?
বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আমাদের এবারের আড্ডার মধ্যমণি বোৎসোয়ানার চোবি ন্যাশনাল পার্কে বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক আফ্রিকান হাতিদের বাস। দেশের উত্তরাঞ্চলে বাস করে বিপন্ন প্রাণী আফ্রিকান বন্য কুকুররা, সারা আফ্রিকায় একমাত্র এখানেই এদের সংখ্যা কিছুটা বেশি। এদেশে জাতীয় উদ্যান ও গেম রিজার্ভ রয়েছে বেশ কয়েকটি। গেম রিজার্ভ কী জিনিস? এগুলো হলো এমন সংরক্ষিত অরণ্য যেখানে নিয়ন্ত্রিতভাবে শিকারের অনুমতি মেলে, যদিও এখন বোৎসোয়ানাতে ট্রফি হান্টিং নিষিদ্ধ।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গেম রিজার্ভ হলো এই দেশের মাঝামাঝি অবস্থিত সেন্ট্রাল কালাহারি গেম রিজার্ভ।
ওপরেঃ কেপ স্টার্লিং, লাইল্যাক ব্রেস্টেড রোলার, গ্রেট পেলিক্যান
নীচেঃ প্যারাডাইস ফ্লাই ক্যাচার, কারমাইন বী ইটার, ক্রেস্টেড বারবেট
চোবি ন্যাশনাল পার্ক আর মরেমি গেম রিজার্ভ রয়েছে পাশাপাশি, চোবি ন্যাশনাল পার্কে আফ্রিকান হাতিদের বাস, প্রায় ৫০০০০ হাতি রয়েছে এই অরণ্যে। এছাড়া, জিরাফ, কেপ বাফেলো, গন্ডার, ওয়ার্টহগ, কুডু, ইম্পালা, সিংহ, জেব্রা ইত্যাদি তো আছেই। পাখিদের মধ্যে আছে কারমাইন বী ঈটার্স, স্পুনবিলস, আইবিস, নানা প্রজাতির স্টর্ক, হাঁস।
ওপরেঃ জিরাফ, বুনো কুকুর, ইম্পালা
নীচেঃ কুডু, ওয়ার্টহগ, চিতা
মরেমি গেম রিজার্ভে রয়েছে ঘাসজমি থেকে শুরু করে ঘন জঙ্গল, জলাভূমি, সবকিছু। ভূমিগত বৈচিত্র্যের জন্যই এখানে জীববৈচিত্র্যও বিশাল। এই অরণ্যে রয়েছে প্রায় ৫০০ প্রজাতির পাখি, এছাড়া প্রাণীদের মধ্যে কেপ বাফেলো, অ্যাঙ্গোলান জিরাফ, দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকান সিংহ, হাতি, জলহস্তী, জেব্রা, দক্ষিণ আফ্রিকান চিতা, হায়েনা, ইম্পালা, রেড লেচওয়ে (Red Lechwe) ইত্যাদি দেখা যায়।
সদা ব্যস্ত মীরক্যাটের দল
এদেশের আরেকটি নামী প্রাণী হলো অনেকটা আমাদের কাঠবেড়ালির মতো দেখতে মীরক্যাট। এরা থাকে মরুভূমিতে, মাটির নিচে বাসা করে দল বেঁধে থাকে। এরা নাকি সবাই খুব কাজের মানুষ, ইয়ে, মানে ব্যস্ত প্রাণী, কেউ কক্ষনও হাত গুটিয়ে বসে থাকে না।
যদিও বোৎসোয়ানার প্রায় নব্বই শতাংশই সাভানা তৃণভূমির অন্তর্গত, দেশের অনেকখানি জমি কালাহারি মরুভূমির মধ্যে ঢুকে পড়েছে, তবে এদেশে বড় গাছপালাও মোটামুটি আছে। প্রথমেই নাম করতে হয় বাওবাব গাছের। আফ্রিকার সঙ্গে বাওবাব গাছের ছবি এমনভাবে জড়িয়ে যে তাকে আলাদা করাটা মুশকিল। আমাদের যেমন 'বৃদ্ধ বট', এদেশে তেমন 'বৃদ্ধ বাওবাব'দের দেখা মেলে। ২০০০ বছরেরও বেশি পুরনো বাওবাব গাছ নাকি পাওয়া যায়। এছাড়া অ্যাকাসিয়া, প্যাপাইরাস, আফ্রিকান ম্যাঙ্গোস্টিন, সসেজ ট্রি ইত্যাদি গাছপালাও রয়েছে।
বাওবাব গাছ
বৃষ্টিপাত কম হওয়ার জন্য, দেশের মানুষজন জীবিকা নির্বাহের জন্য চাষবাসের ওপর একেবারেই নির্ভর করতে পারেন না, বিশেষত গ্রামাঞ্চলের মানুষদের প্রধানত পশুচারণের ওপরেই নির্ভরশীল থাকতে হয়। দেশের প্রায় সত্তর শতাংশ জমি পশুচারণের জন্য ব্যবহার করা হয়। এই অতিরিক্ত পশুচারণের ফলে হচ্ছে কী, জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, ঘাস, গাছপালা জন্মাচ্ছে না, ভূমিক্ষয় হচ্ছে। এই কারণেই ওকাভ্যাঙ্গো বদ্বীপ অঞ্চলও ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘের উদ্যোগে এই সমস্যার সমাধানের জন্য নানা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জাওয়ানেং হীরের খনি
বোৎসোয়ানার অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো হীরে। সরকারী রাজস্বের প্রায় চল্লিশ শতাংশ আসে হীরে থেকে। বোৎসোয়ানা সরকার আর ডি বিয়ার্স কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা ডেবসোয়ানা (Debswana) হলো দেশের সবচেয়ে বড় মাইনিং কোম্পানি। বিশ্বের দুটি উল্লেখযোগ্য হীরের খনি এদের মালিকানাধীন, ওরাপা (Orapa) : বৃহত্তম হীরের খনি, আর জাওয়ানেং (Jawaneng)ঃ গুণমানের নিরিখে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ হীরে পাওয়া যায় এখানে।
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখা যাক, এদেশের মুদ্রা হলো পুলা (Botswanan Pula : Bwp)। এক পুলার মূল্য মোটামুটি সাড়ে ছয় ভারতীয় মুদ্রার সমান।
অন্যান্য দেশের মতো বোৎসোয়ানাতেও শিশুশ্রম একটি সমস্যা। যদিও শিশুশ্রমের হার কমানোর জন্য সরকারি ভাবে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা, দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষজনের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য, ন্যূনতম প্রসাধনসামগ্রী, স্কুল ইউনিফর্মের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সালে UNICEF-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বোৎসোয়ানার ১৬ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষার্থী শিশু স্কুলে যায় না। শিশুশ্রম ব্যবস্থার শিকার এদেশের প্রায় ৯ শতাংশ শিশু। তাদের মধ্যে বহু শিশুকে যেমন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পশুচারণের কাজে লাগানো হয়, তেমন অনেক শিশুকিশোরকে সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন খারাপ ব্যবসার কাজেও লাগানো হয়।
বোৎসোয়ানার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষদের শিশুশ্রম সম্পর্কে সচেতন করার এক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বেশ কিছু বছর আগে UNICEF-এর কর্মী ডিজিটাল ডায়েরিস্ট শোলোফেলো সেলুফারো কিছুদিন কাজ করেছিলেন। সেসময় তিনি এক গ্রামে একটি ছোট্ট ছেলের কাছে শোনেন তার লেখা একটি কবিতা :
।।'আমরাই ভবিষ্যৎ'।।
জেনে খুব কষ্ট হয়।
আমার ভাই রয়েছে খালি পায়ে
পশু চরানোর কাজ করছে,
দাম নেই, ওর কাজের দাম নেই কোনও।
আমার বোনটা...
ভেবে চোখে জলের বান আসে।
ওর বাড়ির অবস্থা ভালো নয়
নিষ্ঠুর লোকগুলো সুযোগ নেয় তাই,
দাসত্বে বেঁধে ফেলে ওকে
দাম নেই, ওর কাজের দাম নেই কোনও।
তবুও, আমরাই ভবিষ্যৎ।।
(।।The Future is us।।
It's so painful to know
That my brother is working barefooted
At the cattle post for no pay.
As for my sister,
The thought of it floods my eyes with water.
Those who are heartless take advantage of her
Because of her family background
Enslaving her for nothing.
Yet the future is us.)
বোৎসোয়ানার মানুষ জন
এবার আসা যাক দেশের মানুষদের কথায়। বোৎসোয়ানার মানুষদের একসঙ্গে বহুবচনে বলা হয়ে 'বাৎসোয়ানা' আর একবচনে 'মোৎসোয়ানা'। বাৎসোয়ানাদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক জনজাতির মানুষ। সোয়ানা (Tswana) গোষ্ঠীর মানুষরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তবে অন্যান্যদের মধ্যে কালাঙ্গা (Kalanga), বাসারোয়া (Basarwa), বাহরেরো (Baherero), বাকগালাগাডি (Bakgalagadi) প্রভৃতি জনগোষ্ঠীও আছেন। সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাকাল্যাঙ্গা (Bakalanga), সান (San) গোষ্ঠীর মানুষরা। এঁদের মধ্যে সান জনগোষ্ঠী সংখ্যায় খুবই কম, এবং তাঁরা এখনও প্রাচীন শিকারনির্ভর জীবনযাত্রাতেই অভ্যস্ত।
বান্টু ভাষাগোষ্ঠীর অংশ, সেৎসোয়ানা (Setswana) ভাষা হল বোৎসোয়ানার সরকারি ভাষা এবং এই দেশের কথ্য ভাষা । এছাড়াও সরকারি কাজে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারকরা হয়।
বাৎসোয়ানারা স্বভাবে ভারি মিশুকে। সবাই মিলে একসঙ্গে মিলেমিশে থাকা, কাজকর্ম করা এসবে তাঁরা বেজায় তৃপ্তি পান। একটা দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষজনের খাওয়াদাওয়া, পোশাক, ভাষা এসবে কিছু কিছু তফাৎ তো থাকবেই, তবু তারই মধ্যে মিলেমিশে থাকতে পারাটাই সবচেয়ে বেশি আনন্দের, তাই না?
এখানে একটা বিষয়ের উল্লেখ না করলেই নয়। বোৎসোয়ানাতে কিন্তু বর্ণবিদ্বেষ বা Racism-এর চল নেই। প্রতিবেশী দেশ সাউথ আফ্রিকাতে বহুবছর ধরে বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে উথাল-পাথাল চলেছে। সারা পৃথিবীর অন্যান্য বেশিরভাগ দেশেই নানারকমের বর্ণবিদ্বেষ দেখা যায়। কিন্তু বোৎসোয়ানাতে কালো এবং সাদা চামড়ার মানুষেরা মিলেমিশেই থাকেন, তাঁরা বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে মাথা ঘামান না। এর মূল কারণ হল, সোয়ানা গোষ্ঠীর মানুষদের এক অনন্য জীবনদর্শন - 'বোথো' , যার মানে হল 'আমরা সবাই এক পরিবারের অংশ'। সোয়ানা মানুষেরা সমগ্র মানবজাতিকে একভাবে সম্মান করেন।
এদেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী বিভিন্ন প্রাণীকে প্রতীক হিসেবে ভক্তি করে (Totem)। প্রায় সারা বিশ্বেই এই পবিত্র জীবদের ভক্তিশ্রদ্ধা করার ব্যাপারটা ছড়িয়ে আছে, যেমন আমাদের দেশে তুলসীগাছ, ষাঁড় ইত্যাদিকে বেশ পবিত্র বলে মনে করা হয়। আসল ব্যাপারটা হলো প্রকৃতি আর প্রাণিজগতের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার কাজটা যাতে আমরা আরও ভালোবেসে করতে পারি, সেজন্যই এই পবিত্র গাছ, পবিত্র প্রাণীর প্রথাগুলো শুরু হয়েছিল। এসো, বোৎসোয়ানার বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর টোটেমদের নিয়ে একটু জেনে নিই।
বাসুবিয়া (Basubiya) গোষ্ঠীর টোটেম হলো জলহস্তী। এঁরা চোবি (Chobe) নদীর ধারের বাসিন্দা, সেখানে জলহস্তী সংখ্যায় বেশি, পাশাপাশি থাকতে হবে, সেকারণেই বোধহয় জলহস্তীকে পবিত্র প্রাণী বলে মেনে নিয়েছেন এঁরা।
ঠিক সেভাবেই বাকওয়েনা (Bakwena) উপজাতির টোটেম কুমির, বাতাওয়ানা (Batawana)দের সিংহ, বাঙ্গোয়াটো (Bangwato)দের ড্যুইকার (Duiker) নামে এক ধরনের অ্যান্টিলোপ জাতীয় প্রাণী, এ নাকি একবার কোনও এক গোষ্ঠীপ্রধানের প্রাণ বাঁচিয়েছিল, সেই কৃতজ্ঞতায় এই প্রাণীটিকে এঁরা পবিত্র মানেন।
রন্দাভেল
এবার রন্দাভেল (Rondavel) এর গপ্প শোনা যাক। এগুলো আর কিছুই না, আফ্রিকান কুঁড়েঘর। এক্কেবারে আমাদের গ্রামবাংলার সাদাসিধে কুঁড়েঘরের মতোই, খড়ের ছাউনি দেওয়া চাল, গোবর নিকোনো মেঝে, কেবল দেওয়ালগুলো পাথর দিয়ে তৈরি, বালি মাটি আর গোবরের গাঁথনি দিয়ে গাঁথা। খড়ের ছাউনিগুলো ঘাসের সুতো দিয়ে ভারি যত্নে সেলাই করে করে বানানো হয়।
এবার চলো পোশাক-আশাকের গপ্প খোঁজা যাক।
বোৎসোয়ানায় যে সোয়ানা গোষ্ঠীর মানুষজন সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি, তাঁরা অনেক আগে, ঔপনিবেশিক শাসনের আগের যুগে বিভিন্ন প্রাণীর চামড়া দিয়ে তৈরি পোশাক পরতেন, সঙ্গে থাকত তামার তার, চামড়া, প্রাণীদের দাঁতের তৈরি গয়নাগাঁটি। তারপর মিশনারিদের প্রভাবে আস্তে আস্তে তাঁরা ইউরোপীয় পোশাকে অভ্যস্ত হতে লাগলেন। এখন রোজকার জীবনে তাঁরা সাধারণ ইউরোপীয় পোশাকই বেছে নেন, বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে দেশের পুরনো ঐতিহ্য মেনে 'কারোস' (প্রাণীর লোম বা পশম দিয়ে বোনা কম্বল) ইত্যাদি পোশাক পরে থাকেন।
সোয়ানা ছাড়াও এদেশের আরেক উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী হলেন হারেরো (Herero) -রা। এঁদের যে পোশাক, হারেরো ড্রেস, সেটিও মিশনারিদের প্রভাবেই গড়ে উঠেছিল। বেশ কয়েকটি স্তরের প্রায় সারা শরীর ঢাকা গাউন জাতীয় পোশাক এটি, তার সঙ্গে মহিলারা মাথায় পরেন কাপড়ের তৈরি একধরনের বড়সড় টুপি।
দেশের পোশাক-আশাক, বাড়িঘর সবই যখন বুড়িছোঁয়া ছুঁয়ে দেখা হলো, খাবারদাবারের কথা তো বলতেই হয়। একটা দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস না জানলে অনেক কিছুই অজানা থেকে যায় তো! বোৎসোয়ানার নিজস্ব ঐতিহ্যশালী খাবার বলতে প্রথমেই বলা যায় সেসওয়া (Seswaa)-র কথা। সাধারণত কোনও বড়সড় অনুষ্ঠানে এটি রান্না হয়, রাঁধুনি হিসেবে থাকেন প্রধানত পুরুষরা। খুব জটিল রেসিপি ভেবো না যেন আবার! বীফ বা মাটনকে কেবল নুন দিয়ে বড় বড় হাঁড়িতে সেদ্ধ করা, ব্যস, এই হলো সেসওয়া রাঁধার নিয়ম। তবে হ্যাঁ, কতক্ষণ সেদ্ধ হবে, নুন কতটা পড়বে, সেসব হিসেব জানিনে, পাকা রাঁধুনি ছাড়া সে কথা কেউই জানেন না।
সেস্ওয়া এবং বোগোবে
আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের আরেকটি খাবার হলো ভুট্টাদানার পরিজ, প্যাপ (Pap), যাকে সেৎসোয়ানা ভাষায় বোগোবে (Bogobe)-ও বলা হয়। এই প্যাপ সকালের জলখাবারে দুধ, মাখন, চিনি সহযোগেও খাওয়া যায়, আবার মাংস, স্যুপ, ইত্যাদির সঙ্গেও খাওয়া যায়। ওই আগে যে সেসওয়ার কথা শুনলে, তার সঙ্গেও এই প্যাপ বা বোগোবির জুড়ি নাকি খাসা লাগে!
তরমুজ নাকি জন্মেছিল...!
খাবারের গপ্প খুঁজতে গিয়ে জানতে পারলাম আমাদের তরমুজের জন্মস্থান নাকি বোৎসোয়ানা বলে মনে করা হয়। ভাবো দেখি, কদ্দূর পাড়ি দিতে হয়েছে সবুজ গোলালো ফলটাকে! নেহাত ফল, তাই আর ভূপর্যটকের খেতাব জোটেনি বেচারার। এছাড়া আছে লেরোৎসি (Lerotse) নামে একরকম ফল, দেখতে নাকি তরমুজের মতোই, ভেতরটা কমলা, মিষ্টি নয়, কাঁচা খেতে অনেকটা শশার মতন। এই ফল আর টক দুধ দিয়ে তৈরি হয় বোগোবে জ্বা লেরোৎসি (Bogobe Jwa Lerotse), উৎসব অনুষ্ঠানের একটি জনপ্রিয় পদ। দেশের মরু অঞ্চলে আরও বেশ কয়েক রকমের মেলন (melon) জাতীয় ফল পাওয়া যায়। মরু অঞ্চলের বাসিন্দাদের খাবার ও জলের প্রয়োজন সেগুলো বেশ ভালোভাবে মেটায়।
রাজধানী গ্যাবোরোন
বোৎসোয়ানার রাজধানী শহর গ্যাবোরোন (Gaborone)। ১৯৬০-এর দশকে, বোৎসোয়ানা স্বাধীনতা লাভা করার পরে, দেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত এই শহরটিকে রাজধানী রূপে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
এবারে এক ঝলকে দেখে নেবো বোৎসোয়ানার জাতীয় পতাকা, জাতীয় প্রাণী, জাতীয় পাখি আর কোট অফ আর্মসের ছবি :
ওপরেঃ বোৎসোয়ানার পতাকা এবং কোট অফ আর্মস
নীচেঃজাতীয় পাখিঃ কোরি বাস্টার্ড,জাতীয় পশুঃ জেব্রা
এবার চিনে নিই বোৎসোয়ানার কয়েকজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানুষদেরঃ
ডঃ ইউনিটি ডাও
বোৎসোয়ানার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বদের মধ্যে প্রথমেই নাম আসে এদেশের প্রথম মহিলা বিচারক ডঃ ইউনিটি ডাও (Dr. Unity Dow) এর। আইনজ্ঞ হিসাবে এঁর অন্যতম কৃতিত্ব হলো দেশের আইনব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করে বোৎসোয়ানার দ্বৈত নাগরিকত্ব (Dual citizenship) সংক্রান্ত আইনে বৈপ্লবিক বদল আনা। আগেকার নিয়ম অনুযায়ী, কেবলমাত্র বাৎসোয়ানা পুরুষদের সন্তানরাই দেশের নাগরিকত্ব পেতেন, যাঁদের মা বাৎসোয়ানা কিন্তু বাবা বিদেশী, তেমন মানুষেরা বোৎসোয়ানার নাগরিকত্ব পেতেন না। ডঃ ডাও এঁদের জন্যও নাগরিকত্বের অধিকার অর্জনের আইন চালু করার ব্যবস্থা করেন। এছাড়া এইডস রোগের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা, মহিলাদের সার্বিক উন্নতির জন্য নানা ব্যবস্থা নেওয়া, ইত্যাদি কাজে তিনি বরাবর নিয়োজিত রয়েছেন। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, এইডস রোগের প্রকোপ বোৎসোয়ানার অন্যতম বড় একটি সমস্যা, যদিও প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য নানা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বহু আন্তর্জাতিক সংস্থার হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে ডঃ ডাও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বোৎসোয়ানার গৃহমন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী (Minister of Infrastructure and Housing Development)। মানবাধিকার রক্ষা সংক্রান্ত কর্মকান্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ ফ্রান্স সরকারের কাছে লিজিঁয় দ্য অনার উপাধিতে ভূষিত হন ২০১০ সালে। এই মানুষটির লেখাতেও বারবার ফুটে উঠেছে তাঁর সাধনা আর সংগ্রামের ছবি।
বেসি হেড
এদেশের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন আরেক ব্যক্তিত্ব, সাহিত্যিক বেসি হেড (Bessie Amelia Emery Head)। জন্মসূত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ হলেও ১৯৬৪ সাল থেকে ইনি বোৎসোয়ানার বাসিন্দা হন, এঁর সাহিত্যকীর্তির বেশিরভাগই বোৎসোয়ানায় থাকাকালীন সৃষ্টি। 'When Rain Clouds Gather', 'A Question of Power', 'Serowe: Village of the Rain Wind' প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি রচনা।
নাইজেল অ্যামোস
খেলাধুলোর জগতে বোৎসোয়ানার বেশ কিছু ব্যক্তিত্ব আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছেন দেশকে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ২০১২ অলিম্পিকে আটশো মিটার দৌড়ে রূপো জয়ী অ্যাথলিট নাইজেল অ্যামোস (Nijel Amos)। দেশের প্রথম অলিম্পিক পদক এসেছে এঁরই হাত ধরে।
অ্যামান্তলে মন্তশো
এছাড়া রয়েছেন ২০১১ সালে ৪০০ মিটার দৌড়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অ্যামান্তলে মন্তশো (Amantle Montsho), আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকসে দেশকে প্রথম পদক এনে দিয়েছেন ইনি।
কাবেলো ক্গোজিমাং
রয়েছেন তিনবারের আফ্রিকা-চ্যাম্পিয়ন হাইজাম্পার কাবেলো ক্গোজিমাং (Kabelo Kgosiemang)।
ম্পুলে ক্বেলাগোবে
১৯৯৯ সালে মিস ইউনিভার্স খেতাব জয় করেছেন বোৎসোয়ানার ম্পুলে ক্বেলাগোবে ( Mpule Keneilwe Kwelagobe )। পেশাদার মডেল এবং ব্যবসায়ী ম্পুলে আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা যিনি এই খেতাব লাভ করেন। বিশ্বসুন্দরী হিসাবে তিনি রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এইড্স্ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার কাজে অংশ নেন। এই মূহুর্তে তিনি লিঙ্গ বৈষম্য এবং সমানাধিকার নিয়ে কাজ করছেন।
বোৎসোয়ানার গপ্প আপাতত এইটুকুই। শেষ পাতের মিষ্টির মত রইল ওকাভ্যাঙ্গো ব-দ্বীপ অঞ্চল নিয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তৈরি এই ছোট্ট ভিডিওটিঃ
ছবিঃ উইকিপিডিয়া এবং পিক্সাবে
বেসি হেড- এর ছবিঃ ব্ল্যাকপাস্ট ডট অর্গ
গ্রাফিক্স ও অতিরিক্ত তথ্য সংযোজনঃ মহাশ্বেতা রায়
- বিস্তারিত
- লিখেছেন ধূপছায়া মজুমদার
- ক্যাটfগরি: ধন ধান্য পুষ্প ভরা
আর্জেন্টিনা
'আর্জেন্টিনা ' নামটা শুনলে প্রথমেই লিওনেল মেসির কথা মনে আসে তো? তারপরে মারাদোনা, ওয়ার্ল্ড কাপ হোক বা কোপা আমেরিকা, ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার ফুটবল যুদ্ধের আঁচ আমাদের গায়ে এসে লাগে খুব ভালোভাবেই। পাড়ায় পাড়ায় ঝুলতে থাকা নীল সাদা পতাকা আর স্বপ্নের ফুটবলশিল্পীদের নাম ছাড়া দেশটা সম্পর্কে আর কী কী জানি আমরা? এত্ত বড় একটা দেশ সম্পর্কে মাত্র একটা নিবন্ধে কি আর খুব বেশি জানা বা লেখা যায়? তবুও চেষ্টা করলাম আমরা, অনেক ছবি আর কিছু তথ্যের মাধ্যমে জেনে নিতে আর্জেন্টিনাকে।
বাঁদিকেঃ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে আর্জেন্টিনার অবস্থান
ডান দিকেঃ আর্জেন্টিনার ম্যাপ
পশ্চিমে চিলি, উত্তরে বলিভিয়া আর প্যারাগুয়ে, উত্তর-পূর্বে ব্রাজিল, পূর্বে উরুগুয়ে আর আটলান্টিক মহাসাগর, দক্ষিণে ড্রেক প্যাসেজ - এই হলো আর্জেন্টিনার সীমানা।
ম্যাপের ছবি :
আর্জেন্টিনা হলো বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ, এবং দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ।
দেশের সরকারী ভাষা স্প্যানিশ। বৃহত্তম স্প্যানিশভাষী দেশ এটি।
প্রাচীন ইউরোপীয় ম্যাপে দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূলের ছবি।
ইন্সেটঃ শিল্পীর কল্পনায় আদিম অধিবাসীদের আক্রমণে পরাস্ত স্পেনীয় অভিযাত্রীরা
'আর্জেন্টিনা'- নাম এল কোথা থেকে?
স্পেনীয় ঔপনিবেশিকেরা দক্ষিণ আমেরিকায় পা রাখার আগে, আজকে আমরা যে অঞ্চলটিকে আর্জেন্টিনা বলে চিনি, সেই বিস্তৃত অঞ্চলে, আদিপ্রস্তর যুগ ( Paleolithic Age) থেকেই বিভিন্ন আদিম জনজাতির মানুষ বসবাস করতেন। এঁরা বেশিরভাগই ছিলেন ভবঘুরে , কিংবা কেউ কেউ কৃষিকাজ , পশুপালনে অভ্যস্ত ছিলেন। স্পেনীয় অভিযাত্রী হুয়ান দিয়াজ দে সলিস ১৫১৬ দক্ষিণ আমেরিকায় প্রথম যে অঞ্চলে পা রাখেন, সেটি ছিল উরুগুয়ে আর পারানা নদীর বিশাল মোহনা। কিন্তু এই অভিযানে সলিস এবং তাঁর বেশিরভাগ সহযাত্রী স্থানীয় জনজাতিদের আক্রমণে প্রাণ হারান। তাঁর অধীনে থাকা বাকি জাহাজগুলি ফিরে চলে যায়। তাদের মধ্যে একটি ব্রাজিলের কাছাকাছি সমুদ্রে ডুবে গেলে কিছু মানুষ সেখানে আটকা পড়েন। সেই সময়ে সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা তাঁদের রুপোর তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী উপহার দেয়। এই রূপো এবং কাল্পনিক রপোর পাহাড়ের গল্প ক্রমে ইউরোপে গিয়ে পৌঁছায়। স্প্যানিশ ভাষায় লোকমুখে সেই বিশাল নদীমুখের নাম হয়ে যায় রিও দে লা প্লাতা (রূপোর নদী)। আর ইতালীয়রা এই অঞ্চলের নাম রাখেন আর্জেন্টিনা , অর্থাৎ 'রূপোর দেশ' কারণ লাতিন ভাষায় রূপোর নাম আর্জেন্টাম। সময়ে সঙ্গে সঙ্গে 'আর্জেন্টিনা' নামটিই সবার মধ্যে প্রচলিত হয়।
ওপে বাঁদিকে থেকেঃ রেইনফরেস্ট অঞ্চল, চাকো, পাম্পাস
নিচে বাঁদিক থেকেঃ প্যাটাগোনিয়া, আন্দিজ পার্বত্য অঞ্চল
ভৌগোলিক দিক দিয়ে দেখতে গেলে আর্জেন্টিনাকে পাঁচভাগে ভাগ করা যায় :
উত্তরপূর্বাঞ্চলে ব্রাজিল ঘেঁষা রেইনফরেস্ট অঞ্চল, চাকো (Chaco) সমভূমি অঞ্চল, উর্বর পাম্পাস (Pampas) তৃণভূমি, প্যাটাগোনিয়া (Patagonia) মালভূমি অঞ্চল আর পশ্চিমে চিলির গা ঘেঁষে আন্দিজ (Andes) পর্বতমালা।
আকোঙ্কাগুয়া
এই আন্দিজ পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আকোঙ্কাগুয়া (Aconcagua) আর্জেন্টিনার মেন্ডোজা প্রদেশে অবস্থিত। এশিয়ার বাইরে যত পর্বতশৃঙ্গ রয়েছে, এটির উচ্চতা তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ৬৯৬০ মিটার।
বিশ্বের সবচেয়ে উর্বর সমভূমি অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আর্জেন্টিনার পাম্পাস তৃণভূমি অঞ্চল, যা এই দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জুড়ে রয়েছে। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস করেন এই অঞ্চলে।
ইগুয়াজু জলপ্রপাত
দেশ জুড়ে রয়েছে প্রায় আড়াইশো জলপ্রপাত, যাদের মধ্যে ইগুয়াজু (Iguazu) জলপ্রপাত সবথেকে বড়। ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সীমানা সৃষ্টিকারী এই বিশাল জলপ্রপাতকে এই দুই দেশ থেকেই দেখতে পাওয়া যায়। ২.৭ কিলোমিটার বিস্তৃত, এবং ২৭৫টি ছোট-বড় প্রপাত মিলে তৈরি এই জলপ্রপাতটি নায়াগ্রার থেকে প্রায় দ্বিগুণ উঁচু এবং ভিক্টোরিয়া ফল্স্ এর থেকেও চওড়া।
১৯৮৪ সালে ইগুয়াজু ফলস্ ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের সম্মান লাভ করে আর ২০১১ সালে এটি নিউ সেভেন ওয়ান্ডার অফ নেচার- এর তালিকায় যুক্ত করা হয়।
ছবি দেখে ইগুয়াজুর বিশালত্ব বোঝা কঠিন, তাই রইল এই ভিডিও।
ওপরেঃ কলোরাডো নদী
নীচেঃ রিও দে লা প্লাতার কোল ঘেঁষে বুয়েনোস আইরেস নগর
প্রধান প্রধান নদী হলো কলোরাডো (Colorado), প্যারাগুয়ে (Paraguay), পারানা (Paraná), সালাদো(Salado), উরুগুয়ে (Uruguay) ইত্যাদি। উরুগুয়ে আর পারানা আটলান্টিকে মেশার আগে মিলিত হয়ে তৈরি করেছে বেসিন অফ দ্য রিও দে লা প্লাতা.
রাজধানী বুয়েনোর আইরেস
দেশের রাজধানী বুয়েনস আইরেস, সালাদো নদীর ধারে মহানগরটি অবস্থিত।
ওম্বু
এদেশের গাছপালার কথা বলতে গেলে সবার আগে আসে পাম্পাস অঞ্চলের একমাত্র চিরহরিৎ বৃক্ষ ওম্বু(ombú)-র নাম। ছাতার মতো দেখতে এই গাছগুলো বাড়ে খুব তাড়াতাড়ি, কিন্তু কাঠ খুব নরম, ছুরি দিয়ে দিব্যি কাটা যায়। তাই এই গাছ দিয়ে বনসাই খুব ভালো হয়।
ওপরের সারি, বাঁদিক থেকেঃ কাইমান, জাগুয়ার, হাওলার মাঙ্কি
নিচের সারি, বাঁদিক থেকেঃ অসেলট, পুমা, ওয়েমুল
আর্জেন্টিনার পশুদের ও সরীসৃপদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সদস্য হলো জাগুয়ার, পুমা, ওসিলোট(Ocelot), হাউলার মাঙ্কি (Howler Monkey), কাইমান (Caiman). অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে টেপির (Tapir), পেকারি (Peccary), ক্যাপিবারা (Capybara), বুশ ডগ (Bush Dog), আর্জেন্টাইন জায়ান্ট টেগু (Argentine giant tegu) নানা প্রজাতির কচ্ছপ অন্যতম।
ওপরের সারি, বাঁদিক থেকেঃ গ্রেটার রিয়া, ফ্লেমিংগো, ট্যুকান
নিচের সারি, বাঁদিক থেকেঃ হামিং বার্ড, ব্ল্যাক ফ্রন্টেড পাইপিং গুয়ান, স্মল বিল্ড টিনামো
পাখিদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় হামিং বার্ড, ফ্লেমিংগো, টুকান, সোয়ালো , স্মল বিল্ড টিনামো
(Small-billed tinamou), ব্ল্যাক ফ্রন্টেড পাইপিং গুয়ান (Black-fronted piping guan), গ্রেটার রিয়া (Greater Rhea) ।
পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চলের প্রাণীদের মধ্যে আন্ডিয়ান কনডর (Andean Condor), আধুনিক বিশ্বের বৃহত্তম উড়ন্ত পাখি, উল্লেখযোগ্য।
সাদার্ন পুডু
ইনসেটঃ নর্দান পুডু, এটি পুডুদের মধ্যে ক্ষুদ্রতম
দক্ষিণ অঞ্চলে বাস করে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম হরিণ পুডু (Pudu)।
ওপরে, বাঁদিক থেকেঃ করমোর্যান্ট, পেঙ্গুইন, ফার সীল
নিচে, বাঁদিক থেকেঃ সী-লায়ন, এলিফ্যান্ট সীল
প্যাটাগোনিয়ার উপকূলে এলিফ্যান্ট সীল, ফার সীল, সী লায়ন আর নানা প্রজাতির পেঙ্গুইন। আরও দক্ষিণে থাকে করমোর্যান্ট (Cormorant)।
ওপরে, বাঁদিক থেকেঃ আসাদো, লোক্রো, এম্পানাদা
নিচে, বাঁদিক থেকেঃ দালচে দে লেচে, মাহ্তে
এবার আসি খাওয়াদাওয়ার কথায়। আর্জেন্টিনা হল বিশ্বের সর্বাধিক মাংস ব্যবহারকারী দেশ। এদেশের নিজস্ব খাবারের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ হলো আসাদো (Asado), ঠিক একটা পদ নয়, বারবিকিউয়ের আর্জেন্টিনীয় সংস্করণ হলো এই আসাদো।
এছাড়া আছে পুরভরা পেস্ট্রি, যার নাম এম্পানাদা (Empanada)
ভুট্টা, বীনস, মাংস, পেঁয়াজ, আর্জেন্টিনার বিশেষ আলু (Papachola) মিশিয়ে তৈরি পদ লোক্রো (Locro)
দালচে দে লেচে (Dulce de leche) হল মিষ্টি দুধ ঘন করে তৈরি এক বিশেষ সস যা বিভিন্ন মিষ্টি খাবার তৈরি করতে ব্যবহার হয়। এই পদটি নানা নামে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হয়। বলাই বাহুল্য, আর্জেন্টিনার খাবার-দাবারের মধ্যে দেশীয় উপকরণের সঙ্গে ইউরোপীয় প্রভাব অনেকটাই রয়েছে।
খাঁটি আর্জেন্টিনীয় পানীয় হলো মাহ্তে (Mate)। এটি তৈরি এবং পান করার জন্য বিশেষ সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়।
ইয়ের্বা মাহ্তে (Yerba Mate) -র পাতা গরম জলে ভিজিয়ে চা- এর মত পানীয় তৈরি করা হয়। তারপরে একধরনের বিশেষ আকৃতির পাত্রে (Mate / Guampa) ঢেলে বম্বিলা (bombilla) নামক একটি ধাতব স্ট্রয়ের সাহায্যে পান করা হয়।মাহ্তে-এর ও 'টীব্যাগ ' সংস্করণ রয়েছে আর্জেন্টিনাবাসীর জন্য, 'তারাগি (Taragui.)' নামের ব্র্যান্ড।
খেলাধূলা সম্পর্কে দু'কথা না বললে আর্জেন্টিনা দেশটা সম্পর্কে অনেক কথা বলা বাকি থেকে যায়।
বাঁদিক থেকেঃ দিয়েগো মারাদোনা, গ্যাব্রিয়েলা সাবাতিনি, লিওনেল মেসি
ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনার দেশ, নতুন প্রজন্মের ফুটবল-আইডল লিওনেল মেসির দেশ আর্জেন্টিনা, এ তো জানাই আছে। গ্যাব্রিয়েলা সাবাতিনিকে চেনো কি? আশি এবং নব্বইয়ের দশকের প্রথম সারির মহিলা পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন গ্যাব্রিয়েলা, ১৯৮৮ সালের সিওল অলিম্পিকে রৌপ্য পদক জেতেন।
ওপরেঃ আর্জেন্টিনার মহিলা হকি টীম
নিচেঃ পাটো খেলা
বিশ্ব ফুটবলে আর্জেন্টিনার সাফল্যও কারও অজানা নয়। কিন্তু, জানো কি, মহিলাদের হকিতে সেদেশের ঝুলিতে কী কী সাফল্য জমা হয়ে আছে? চারটে অলিম্পিক পদক, দুবারের বিশ্বকাপ, একবারের ওয়ার্ল্ড লীগ আর সাতটা চ্যাম্পিয়নস ট্রোফি।
বাস্কেটবল, টেনিস, পোলো, বক্সিং, কার রেসিং, এগুলোও দেশবাসীর কাছে খুবই জনপ্রিয়।
যদিও দেশের জাতীয় খেলা হলো পাটো (Pato), পোলো আর বাস্কেটবলের মিশ্রিত এক সংস্করণ, ঘোড়ায় চড়ে খেলতে হয় এটি, তবে জনপ্রিয়তার নিরিখে ফুটবল, কার রেসিং, টেনিস ইত্যাদির ধারেকাছে আসে না এই খেলাটি।
কেমন করে খেলা হয় পাটো, দেখতে পারো এই ভিডিও তেঃ
জাতীয় খেলা নিয়ে যখন কথাই হল, তখন আর্জেন্টিনার অন্যান্য জাতীয় চিহ্ন গুলির সম্পর্কেও জেনে নিইঃ
জাতীয় প্রতীকঃ মে মাসের সূর্য / সল দে মেয়ো (Sun of May)। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সূর্য হলেন ইন্কাদের সূর্যদেবতা ইন্তি-এর প্রতিরূপ। আর 'মে' বলতে ১৮১০ সালের মে বিপ্লবকে বোঝানো হয়, যখন প্রথম স্পেনের শাসনের থেকে স্বাধীনতা চেয়েছিল আর্জেন্টিনা। এই সল দে মেয়ো আর্জেন্টিনা এবং উরুগুয়ে- দুই দেশেরই প্রতীক, কিন্তু তাদের ছবি দুইভাবে আঁকা হয়।
জাতীয় পতাকাঃ দুটি সমান্তরাল হালকা আকাশী নীল অনুভূমিক ফালির মাঝে একটি সাদা ফালি, সেই সাদার ওপরে এক সোনালি হলুদ সূর্যের প্রতীক - এই হল আর্জেন্টিনার পতাকা। ১৮১২ সালে, আর্জেন্টিনার স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পতাকাটি প্রথম তৈরি করা হয় । ১৮১৮ সালে পতাকার মাঝে সল দে মেয়োকে বসানো হয়।
জাতীয় প্রাণীঃ রেড ওভেনবার্ড (Rufous hornero) হল আর্জেন্টিনার জাতীয় প্রাণী।
জাতীয় গাছ ও ফুলঃ ককস্পার কোরাল গাছ (Erythrina crista-galli) আর্জেন্টিনার জাতীয় গাছ আর এই গাছের ফুল আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুল। এই গাছ সাধারন ভাবে সেইবো নামেও পরিচিত।
প্রকৃতি, এবং প্রাণীকুল বাদ দিয়েও একটা দেশের সম্পর্কে জানতে পরিচিত হতেই হয় সেই দেশের মানুষদের এবং তাঁদের কর্মকান্ডের সঙ্গে। এসো জেনে নিই আর্জেন্টিনার কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে, যাঁদের কাজ আজকের আর্জেন্টিনাকে তার নিজস্ব পরিচিতি দিয়েছে।
ওপরে, বাঁদিক থেকে ডান দিকঃ ফ্রান্সিস্কো মোরেনো, সিসিলিয়া গ্রিয়ারসন, ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো
মাঝে, বাঁদিক থেকে ডান দিকঃ লুই ফেদেরিকো লেলোয়া, খুলিও কোর্তাসার, এভা পেরোন
নিচে, বাঁদিক থেকে ডান দিকঃ খোর্খে লুইস বোর্খেস, চে গেভারা, পোপ ফ্রান্সিস
ফ্রান্সিসকো মোরেনো (Francisco Moreno)(১৮৫২-১৯১৯) উনবিংশ শতাব্দীর এক বিখ্যাত প্রকৃতিবিদ ও অভিযাত্রী। দেশের প্রথমদিকের এক নৃতত্ত্ববিদ হিসেবে তিনি আর্জেন্টিনা ও চিলির সীমানা সংক্রান্ত বিতর্কের নিষ্পত্তির দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর জীবনের প্রথমদিকের একটি অভিযান ছিল রিও নিগ্রো (Río Negro Territory) অভিযান। এরপর বহু বছর ধরে নানা দুঃসাহসিক অভিযানে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। শেষজীবনে তিনি রাজনীতি ও জনশিক্ষার প্রসারে নিজেকে যুক্ত করেন। লা প্লাতা মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি (La Plata Museum of Natural History)-এর প্রতিষ্ঠাতা এই মানুষটি।
সিসিলিয়া গ্রিয়ারসন (Cecilia Grierson)(১৮৫৯-১৯৩৪) আর্জেন্টিনার প্রথম মহিলা যিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন। মেডিকাল স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময়ে তাঁকে লিখে জানাতে হয় কেন তিনি চিকিৎসক হতে চান। পড়াশোনা চলাকালীন তিনি স্বেচ্ছাসেবী নার্স হিসাবে কাজ করতেন। সেই সময়েই প্রথম ঘন্টা লাগানো অ্যাম্বুল্যান্সের কথা তাঁর মাথায় আসে। তার আগে অবধি শুধুমাত্র দমকলে ঘন্টা বাজানো হত। সিসিলিয়া আর্জেন্টিনার প্রথম নার্সিং স্কুল এবং প্রথম ফার্স্ট এইড সোসাইটি স্থাপন করেন; চিকিৎসাবিদ্যার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বই লেখেন, এবং কিনেসিওলজি (kinesiology -the science of human movement) চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। মজার ব্যাপার হল, সেই সময়ের আইন অনুসারে, সিসিলিয়ার পেশাদার চিকিৎসক হিসাবে কাজ করা অপরাধ বলে গন্য ছিল। কিন্তু তিনি থেমে থাকেন নি। মেয়েদের সার্বিক উন্নত জীবনযাত্রার জন্য আরোও নানা কাজকর্মে জড়িয়ে ছিলেন।
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো (Victoria Ocampo)(1890-1979)ছিলেন একজন সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী। ' বিশুদ্ধ আর্জেন্টিনীয় নারী'- এই শিরোপা তঁকে দিয়েছিলেন বোর্খেস। নিজের সমসাময়িকদের মধ্যে সবথেকে সুপরিচিত দক্ষিণ আমেরিকান নারী ছিলেন ওকাম্পো। তিনি শুধু নিজেই লিখতে না, তিনি অন্যান্য লেখকদের উৎসাহ দিতেন এবং কড়া সমালোচক ছিলেন। তিনি 'সুর' নামক বিখ্যার সাহিত্য পত্রিকাটি প্রকাশ করতেন। দেশবিদেশের সাহিত্যিকদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। দক্ষিণ আমেরিকা সফরে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেশ কিছুদিন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর অতিথি হয়ে ছিলেন।
লুই ফেদেরিকো লেলোয়া (Luis Federico Leloir)(১৯০৬-১৯৮৭) আর্জেন্টিনার এক নোবেলজয়ী চিকিৎসক ও বায়োকেমিস্ট। সুগার নিউক্লিওটাইড, কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজম, রেনাল হাইপারটেনশন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তাঁর গবেষণা আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করে এবং গ্যালাক্টোসেমিয়া নামে একটি জন্মগত রোগের নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে আলোকপাতে সাহায্য করে। ১৯৭০ সালে তিনি রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ।
খুলিও কোর্তাসার*(Julio Cortazar)(1914-1984) ছিলেন এই দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক ও সাহিত্যিক। ১৯৬০-৭০ এর দশকগুলিতে সারা দুনিয়ায় স্প্যানিশ সাহিত্য নিয়ে যে প্রবল উৎসাহ জাগে,সেই সময়ে ইউরোপ ও আমেরিকার স্প্যানিশভাষী মানুষদের মনে তিনি গভীরভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি তিনি ইউনেস্কোর অনুবাদক হিসেবেও কাজ করেছেন।
এভা পেরোন (María Eva Duarte de Perón) (১৯১৯-১৯৫২) ছিলেন আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি খুয়ান পেরোনের স্ত্রী। অত্যন্ত গরিব পরিবারের মেয়ে এভা খুবই অল্প বয়সে গ্রাম থেকে বুয়েনস আইরেসে চলে আসেন অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। ঘটনাক্রমে কয়েক বছর পরে খুয়ান পেরোনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এভা পেরোন শ্রমিকদের অধিকার এবং মহিলাদের ভোটাধিকার নিয়ে সরব হন, এবং আর্জেন্টিনার মহিলারা ১৯৪৭ সালে প্রথম ভোট দেওয়ার সুযোগ পান। আর্জেন্টিনার খেটে খাওয়া মানুষদের কাছে এভা ছিলেন 'স্পিরিচুয়াল লিডার অফ দ্য নেশন' । এই উপাধি আর্জেন্টিনা আজ অবধি একমাত্র এভাকেই দিয়েছে। তাঁর জীবন কাহিনি নিয়ে তৈরি হয়েছে মিউজিক্যাল ছায়াছবি 'এভিটা' ।
আর্জেন্টিনার সাহিত্যজগতের এবং স্প্যানিশ ভাষায় সাহিত্যের এক প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব হলেন খোর্খে লুইস বোর্খেস* (Jorge Luis Borges)(১৮৯৯ -১৯৮৬)। প্রখর কল্পনাশক্তি ও প্রতিভার অধিকারী এই সাহিত্যিক একাধারে ছিলেন কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক এবং অনুবাদক। বোর্হেস এর হাত ধরে স্প্যানিশ এবং লাতিন আমেরিকার সাহিত্যচর্চা আলাদা মত্রা পায়।
চে গেভারা(Che Guevara)(১৯২৮-১৯৬৭), কিংবদন্তী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস ও সাম্যবাদের প্রতিষ্ঠার ব্রতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তিনি আর্জেন্টিনারই মানুষ। ডাক্তারির ছাত্র হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাজের সূত্রে দেখা দারিদ্র্যের চেহারা তাঁর চেতনায় বৈপ্লবিক চিন্তাধারার জন্ম দেয়। কিউবার বিপ্লবের সময়ে এবং তার পরে সেখানকার অর্থনীতি ও দেশের সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনেকখানি। তাঁর কৃতিত্ব এতটাই, যে, টাইম ম্যাগাজিনের 'বিংশ শতাব্দীর ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব'দের তালিকায় তাঁর নাম রাখা হয়।
পোপ ফ্রান্সিস (১৯৩৬-), প্রথম ইউরোপের বাইরের মানুষ হিসেবে ২৬৬ তম পোপ নির্বাচিত হন ২০১৩ সালে, তিনিও আর্জেন্টিনার মানুষ। মানবিকতার জন্য সারা বিশ্ব তাঁকে শ্রদ্ধা করে। দরিদ্র মানুষের সেবায় ও বিভিন্ন সামাজিক অবস্থানের মানুষজনের মধ্যে শান্তির বাণী প্রচারের দ্বারা মেলবন্ধন ঘটাতে তিনি অক্লান্তভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন।
আর্জেন্টিনা সম্পর্কে আপাতত এটুকুই। আরোও অনেকের সম্পর্কে , অনেক বিষয় সম্পর্কে জানা- তাও বাকি রয়ে গেল। কেমন লাগল আর্জেন্টিনা সম্পর্কে আমাদের এই নিবন্ধটি? জানিও আমাদের।
(* বিভিন্ন নামের বানানগুলি রয়্যাল অ্যাকাডেমী স্পেন প্রণীত, ২১টি দেশে মান্য ব্যকরণ ও উচ্চারণবিধি অনুযায়ী লিখিত;
তথ্য সৌজন্যঃ জয়া চৌধুরী, স্প্যানিশ শিক্ষক এবং অনুবাদক)
গ্রাফিক্স ও অতিরিক্ত তথ্য সংযোজনঃ মহাশ্বেতা রায়
নিচে রইল ইচ্ছামতীতে এর আগে প্রকাশিত আর্জেন্টিনার একটি গল্পের লিঙ্কঃ
- বিস্তারিত
- লিখেছেন ধূপছায়া মজুমদার
- ক্যাটfগরি: ধন ধান্য পুষ্প ভরা