সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

এক মুদীর এক মেয়ে ছিল। মুদী সকলের কাছে গল্প করে বেড়াত যে “আমার মেয়ে যেমন কাজ করে, তেমন আর কেউ পারে না।” একদিন সে রাজামশাইয়ের কাছে বড়াই করে বল্‌ল “আমার মেয়ে চড়কা দিয়ে খড় থেকে সোনার সুতা বানাতে পারে।” রাজা খুব টাকা ভাল বাস্‌তেন। একথা শুনে তিনি বল্‌লেন, “সত্যি? তাহলে তােমার মেয়েকে কাল আমার বাড়ী নিয়ে এস।”

মুদীত ভারি মুস্কিলে পড়্‌ল। সত্যি সত্যি করে কি আর খড় থেকে সােনার সুতা হয়? মুদী শুধু বড়াই করবার জন্য ও কথাক বলেছিল। কিন্তু রাজা মশাইএর হুকুম, কাজেই এখন আর কি করে। পরদিন সে তার মেয়েকে নিয়ে রাজার বাড়ী গেল। রাজা সেই মেয়েকে এক ঘরে নিয়ে গেলেন। সে ঘর ভরা কেবল খড়, আর এক কোনে একটা চড়কা আছে। সেই চড়কা আয় খড় দেখিয়ে রাজা বল্লেন “কাল সকালের মধ্যে এই সমস্ত খড় কেটে সােনার সুতা বানিয়ে রাখ্‌বে। যদি না পার তবে তােমাকে কেটে ফেল্‌ব।”

রাজা মশাই চলে গেলে, মেয়েটি বসে বসে কাঁদ্‌তে লাগ্‌ল। সেত জানেনা কি ক’রে খড় থেকে সােণার সুতা করতে হয়। আর রাজা মশাই বলেছেন, না পার্‌লে তাকে কেটে ফেল্‌বেন! তাই সে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কেবলি কাঁদ্‌তে লাগ্‌ল।

এমন সময় কোত্থেকে একটি ছােট্ট মানুষ ঘুট্‌ ঘু্‌ট্‌ করে সেই এসে ঢুক্‌ল। তার চেহারা এম্‌নি যে দেখলে না হেসে থাকা যায় না। এক হাত লম্বা মানুষটি, বােগা রােগা হাত পা, মস্ত বড় পেট, আর লম্বা দাড়ি! সে এসে মুদীর মেয়েকে বল্‌ল,” তুমি এত কাঁদ্‌ছ কেন? তােমার কি হয়েছে?”

মুদীর মেয়ে বল্‌ল, “রাজামশাই আমাকে এই ঘরে বন্ধ করে রেখেছেন, আর বলেছেন যে কাল সকালের মধ্যে এই সব খড় কেটে সােণার সুতা তৈরী করে দিতে না পার্‌লে আমাকে কেটে ফেল্‌বেন। খড় থেকে কি কখন সােণা হয়? তাত আমি পার্‌ব না; কাজেই রাজা আমাকে কেটে ফেল্‌বেন!”

সেই বামন এই কথা শুনে বল্‌ল, “আচ্ছা, যদি আমি এই খড় সােণা ক’রে দিতে পারি, তবে আমাকে কি দেবে?” মেয়েটি বল্‌ল, “আমার গলার হার দেব।”

তখন বামন চরকা নিয়ে বস্‌ল। চরকার ভিতর খড় দিয়ে ঘর্‌ ঘর্‌ ক’রে ঘােরায় আর অমনি সেই খড় লম্বা লম্বা সােণার সুতা হ’য়ে বেরিয়ে আসে! এমনি করে দেখ্‌তে দেখ্‌তে সে সমস্ত খড়কে সােণা বানিয়ে ফেল্‌ল। তারপর মুদীর মেয়ের গলার হার নিয়ে চলে গেল।

পরদিন সকালে রাজা এসে দেখেন সমস্ত খড় সােণা হয়ে গেছে। তা দেখে তিনি বড়ই আশ্চর্য্য হ’লেন আর তখনই অনেক খড় নিয়ে এলেন। সেই খড় গুলােকে আর একটা ঘরে রেখে তিনি মেয়েকে বল্‌লেন, “এই সব খড় থেকে আবার সােণার সুতা বার কর্‌তে হবে। কাল সকালের আগেই কর্‌বে, যদি না পার, তোমাকে কেটে ফেল্‌ব।” এই বলে ত রাজামশাই চলে গিয়েছেন। তারপর মুদীর মেয়ে ব’সে ব’সে কাঁদ্‌ছে আর ভাব্‌ছে, “আজও যদি সেই বামণ আসে ত বেশ হয়।”

এমন সময় সত্যি সত্যিই সেই ছোট্ট মানুষটি ঘুট্ ঘুট্‌ ক’রে এসে উপস্থিত! সে জিজ্ঞাসা করল, “আজ আমায় কি দেবে?” মুদীর মেয়ে বল্‌ল, “হাতের বালা দেব।”

অমনি ঘরর্ ঘরর্ ঘরর্ চরকা ঘুরতে লাগ্‌ল, আর দেখ্‌তে দেখ্‌তে সেই ঘর ভরা সমস্ত খড়, চক্চকে সোণার সুতা হয়ে গেল। তারপর বালা নিয়ে বামন চ’লে গেল।

রাজা এসে, সোণা দেখে, ভারি খুসী হলেন। তারপর আরো ঢের বেশী খড় এনে আরো বড় একটা ঘর ভ’রে দিয়ে মুদীর মেয়েকে বল্‌লেন, “আজ রাত্রের মধ্যে যদি এই খড় থেকে সোণা বানাতে পার, তবে তোমাকে আমার রাণী কর্‌ব, আর যদি না পার তবে মেরে ফেল্‌ব।” রাজা ভাব্‌লেন “মুদীর মেয়ে হ’লে কি হয়, খড় থেকে কেমন সোণা করে দেয়! একেই রাণী কর্‌ব আর দিন রাত কেবল খড় কাটাব। বাঃ, আমার কত সোণা হবে!”

সেদিনও মুদীর মেয়ে ভাব্‌ছে, “যদি বামন আসে ত বেশ হয়,” আর অমনি বামন এসে উপস্থিত। বামন বল্ল, “আজ কি দিবে?” মুদীর মেয়ে বল্ল, “আর তো আমার কিছু নেই।” বামন বল্‌ল, “আচ্ছা, বল, তুমি রাণী হ’য়ে তোমার প্রথম ছেলেটি আমাকে দিবে কি না?”

খড় ত কাট্‌তেই হবে, সােণা ত বানাতেই হবে, তা না হ’লে ত কেটেই ফেল্‌বে। কাজেই মুদীর মেয়ে বল্ল, হাঁ, দিব।”

তাই সেদিনও বামন সমস্ত খড় কেটে সােণার সুতা বানিয়ে দিল, আর যাবার সময় ব’লে গেল, “মনে থাকে যেন।”

তারপর রাজা এসে দেখলেন সত্যি সত্যি তাঁর সব খড় সােণা হয়েছে। দেখে আর তাঁর খুসীর সীমাই রইল না। তিনি তখনি পুরুত ডাকিয়ে ঢাক ঢােল বাজিয়ে মুদীর মেয়েকে তাঁর রাণী ক’রে ফেল্লেন।

কিছুদিন পর রাণীর একটি সুন্দর ছেলে হ’ল। এতদিনে সে বামনের কথা রাণী প্রায় ভুলেই গিয়েছেন। কিন্তু বামন তাঁকে ভোলেনি। একদিন সে হটাৎ রাণীর কাছে এসে বলল, “মনে আছে ত? এখন তােমার ছেলে দাও।” রাণীর মাথায় ত আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। তিনি কত কিছু দিতে চাইলেন, সে কিছুতেই রাজি হল না। সে বল্ল, “ছেলেটি চাই, তা ছাড়া আর কিছুতেই হবে না।” তখন রাণী ভয়ানক কাঁদ্‌তে লাগ্‌লেন। তাঁর কান্না দেখে বামনের মনে একটু দুঃখ হ’ল। সে বল্‌ল, “আচ্ছা, যদি তিন দিনের মধ্যে আমার নাম বল্‌তে পার, তবে তোমার ছেলেকে নেব না।” এই ব’লে বামন চ’লে গেল। অমনি রাণী কর্‌লেন কি যত রকমের বিদ্‌ঘুটে নাম আছে সব নাম জান্‌বার জন্য চারিদিকে লােক পাঠিয়ে দিলেন।

তার পরদিন বামন এসে জিজ্ঞাসা কর্‌ল,“বলত আমার নাম কি?” রাণী বল্‌লেন, “তােমার নাম কালু।” বামন মাথা নেড়ে বল্‌ল, “হ’ল না।” “তবে কি, কানাই?” বামন হাস্‌তে হাস্‌তে বল্‌ল, “না, না। হ’ল না। আবার কাল আস্‌ব।”

তার পরদিন বামন আবার এসে বল্‌ল, “বলত আমার নাম কি?” রাণী বল্‌লেন, “হয় গদাধর, না হয় পাঁচু, নইলে মাণিক।” বামন বল্ল, “হোঃ হো হ’ল না! আবার কাল আস্‌ব।”

আর একদিন মোটে বাকী আছে। রাণীর মনে ভারি ভয় হয়েছে। বামনের কি নাম, তিনি কি ক’রে জান্‌বেন? তিনি নামও বল্‌তে পার্‌বেন না, কাজেই ছেলেকেও দিয়ে দিতে হবে।

এমন সময় যে সব লোকদের তিনি নাম জান্‌তে পাঠিয়ে ছিলেন, তাদের মধ্যে একজন এসে বল্‌ল, “কই, কোন নূতন নাম ত জান্‌তে পার্‌লাম না। কিন্তু বনের ভিতর দিয়ে আস্‌বার সময় একটা ভারি মজা দেখেছি! বনের ভিতরে একটা ছোট পাহাড়ের উপর একটা ছোট্ট ঘর আছে। দেখ্‌লাম কি, সেই ঘরের সাম্‌নে, আগুন জ্বেলে একজন একহাত লম্বা মানুষ লাফাচ্ছে আর বল্‌ছে—

আজ কর্‌ব রান্না খা’ব পেট ভ’রে,
কাল আন্‌ব রাণীর ছেলে, ড্যাং ড্যাং ক’রে,
আমি রাম-খেল-তিলক-সিং,
তাই নাচি তিড়িং তিড়িং।


একথা শুনেই ত রাণী বুঝ্‌তে পার্‌লেন যে সেই এক হাত লম্বা মানুষ আর কেউ নয়, সেই বামন, আর তার নাম,
রাম-খেল-তিলক-সিং। তখন আর তাঁর মনে কোন ভাবনা রইল না!

তার পরের দিন বামন আবার এসেছে। সে ভাবছে, “রাণী কখনই আমার নাম বল্‌তে পার্‌বে না, আর আমি মজা ক’রে তা’র ছেলেকে নিয়ে পালাব।” তাই সে ভারী হাস্‌তে হাস্‌তে বলল, “আজ বল দেখি আমার নাম কি?”

রাণী প্রথমে বল্‌লেন, “তোমার নাম পিঠ কুঁজো।’, বামন বল্‌ল, “দূর দূর হ’লো না।”

রাণী যেন কতই ভাবছেন, এমনই মুখ করে বল্‌লেন, “তবে হাঁড়ি মুখো।”

মনের মুখে হাসি আর ধরে না। সে বল্ল, “হ’ল না, হ’ল না! আর শুধু এক বার।” ব’লে সে খুব হাত তালি দিতে লাগ্‌ল। তখন রাণী বল্‌লেন, “তবে বুঝি রাম-খেল-তিলক-সিং।” আর।

একথা শুনেই বামন এমন ভয়ানক চম্‌কে উঠল একটু হ’লে সে পড়েই যেত। তারপর ভয়ানক রেগে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বল্ল, “কোন্‌ সয়তান তোমাকে বলে দিয়েছে! কোন্ ডাইনি তোমাকে বলেছে!” ব’লে সে দুই হাতে মাথার চুল ছিঁড়্‌তে ছিঁড়্‌তে সেখান থেকে চেঁচিয়ে ছুটে পালাল।

( মূল বানান অপরিবর্তিত)

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা