খেলাঘরখেলাঘর

পাপাঙ্গুল আর অনিফিশ

.... অনিফিশ...সেই হোগলা পাতার ছাউনি দেওয়া পাপাঙ্গুলের ঘরে বসে সূর্যাস্ত দেখছিল। আস্তে অস্তে সন্ধ্যে নামছে সবুজ গাঁয়ে। একটু আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে..হোগলা পাতার ছাউনি থেকে টুপটাপ -টুপটাপ জল পড়ছে। বিকেল বেলার কমলা আলো আর বৃষ্টি ভেজা মাটির গন্ধে অনিফিশ এর নরম মনটা আরো নরম হয়ে গেছে। অনেক হুড়োহুড়ি আর আনন্দের পর পাপাঙ্গুলের দেশের লোকেরা ফিরে গেছে তাদের নিজেদের বাড়ি...এখন অনিফিশ একটা ছোট্ট ছুটি পেয়েছে। পাপাঙ্গুলও নেই ঘরে, সে বেরিয়েছে তার "ডাকপুলি"র পুটুলি নিয়ে সারা গাঁয়ে ডাকপুলি বিলি করতে। তার সেই ডাকপুলি পেয়ে ছেলেরা সবাই খুব খুশী। কি সুন্দর ক্ষীরের পুলি ! তাতে আবার কি সুন্দর একটা মিষ্টি গন্ধ। পাপাঙ্গুল তাকে বলেছে, সে এগুলো বাংলাদেশ থেকে এনেছে।ওখানে মা ঠাকুমারা শীতকালে নানা রকম পুলি পিঠে বানান।...আহা!তার নাকি ভারি ভালো স্বাদ। অনিফিশ তো কোনো দিনও বেশি দূরে যায়নি, এসব খায়নি, তার খাবার তো খালি সমুদ্রের ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন আর মাঝে মাঝে তারই মধ্যে কখনো যদি পায়, দু একটা ছোট্ট জলের পোকা। পাপাঙ্গুল অনিফিশকে দিয়েছে একটা পুলি। সেটা খেয়ে অনিফিশ তো বেজায় খুশী।

অনিফিশ আপন মনে বসে বসে ভাবছিল এসব কথা। হটাত করে পিছন থেকে পাপাঙ্গুলের গলা -"কি? আর একটা ডাকপুলি খাবে নাকি?" অনিফিশ খুব চমকে উঠে লজ্জা পেয়ে গেল...সে তো খুব লাজুক। এমনি করে জিজ্ঞেস করলে খুব লজ্জা পায়। তা ছাড়া সে যে এখন মনে মনে ডাকপুলির কথা ভাবছিল, পাপাঙ্গুল সেটা কি করে যে টের পেয়ে গেল সেটা ভেবে অনিফিশ খুব অবাক হয়ে গেল।

পাপাঙ্গুল অনিফিশকে বলল "অনিফিশ..তুমি চটপট তৈরী হয়ে নাও, তোমায় আজ এক্ষুনি একটা জায়গায় নিয়ে যাব।" অনিফিশ বলল, "আমার তৈরী হওয়ার কি আছে...তুমি আমায় সঙ্গে নিলে আমি সব সময় তৈরী।" এই বলে সে তার ছোট্ট পাখনা দুটো একটু নেড়ে একটা ডিগবাজি খেয়ে নিল। তারপর পাপাঙ্গুলের হাত ধরে অনিফিশ চললো সেই সবুজ পথ বেয়ে। কিছুক্ষণ হাঁটার পর তারা একটা একটা টিলার নিচে এসে পৌছল। অনিফিশ চারিদিকে চেয়ে পাপাঙ্গুলকে বলল -
"আমরা এবার কোথায় যাব?"পাপাঙ্গুল তার সবুজ চুলটা একটু ঠিক করে নিয়ে বলল " তুমি আগে তোমার চোখ দুটো বন্ধ কর...দেখো তোমায় কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়।" এই বলে পাপাঙ্গুল তার হাত দিয়ে অনিফিশের চোখটা বন্ধ করে দিল।।অনিফিশকে একটা সুরঙ্গের মধ্যে দিয়ে নিয়ে চললো কিছুক্ষণ। ছোট্ট অনিফিশ তো ছটফটকরে বলে "পাপাঙ্গুল, ও পাপাঙ্গুল, আমরা কোথায় যাচ্ছি? বলো না...আমরা কোথায় যাচ্ছি?"পাপাঙ্গুল হাসতে হাসতে বলে চুপ করে দেখো না কোথায় নিয়ে যাই।..এ ভাবে কিছুক্ষণ চলার পর পাপাঙ্গুল অনিফিশের চোখ থেকে হাতটা সরিয়ে নিল। অনিফিশ চোখ বন্ধ করেই বুঝলো একটা হালকা সবুজ আলোর আভাস...তারপর চোখ পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পেল সবুজ মশালের আলো। চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা মাঝে একটা ছোট জায়গা খুব সুন্দর। সেখানে সব পাপাঙ্গুলের দেশের লোকেরা এসে জড়ো হয়েছে।। ছেলে-বুড়ো-মেয়ে-ছোট-বড় ..কেউ বাদ নেই।তারা সব্বাই সুন্দর করে সেজেছে, তাদের কারো হাতে সবুজ মশাল, কারো হাতে বাজনা। ছোট্ট ছোট্ট পাপাঙ্গুলরা ভেঁপু বাজছে, অনেকে আবার মাথায় সবুজ পালক দিয়ে সেজেছে।পাপাঙ্গুল মানেই তো সবুজ..এখানে সব্বাই সবুজ কে ভালবাসে। অনেকগুলো বাচ্ছা পাপাঙ্গুল ছুটে  অনিফিশের কাছে এসে হাতে হাত ধরে গোল করে অনিফিশকে ঘিরে নাচতে সুরু করলো। অনিফিশ এসব দেখে আনন্দে আত্মহারা।সে খুশী ধরে রাখতে পারছে না, তার চোখের মনি দুটো জ্বলজ্বল করে উঠেছে খুশিতে..চোখের কোণে দু ফোঁটা খুশির জল। সব্বাই চারিদিক থেকে গাইছে গান। "আহা আলঙ্গুশ...আজকে মোদের মেজাজ বড় খুশ।".....সব্বাই মিলে অনিফিশকে নিয়ে গেল সেই টিলার মাথায়।। সেখানে আগুন জ্বেলে বসে আছে বড়রা। তারা অনিফিশের গলায় একটা সবুজ ফুলের হার আর মাথায় পাতার মুকুট পরিয়ে দিল।পাপাঙ্গুলের দেশ তাকে স্বাগত জানালেও, অনিফিশ তো এই এত্ত আনন্দ এত্ত সব্বার ভালবাসা কোনো দিন দেখে নি তাই সে ভারী খুশি হয়ে পাপাঙ্গুলকে জড়িয়ে ধরল।পাপাঙ্গুল তার কানের কাছে মুখ এনে বলল -"আজ থেকে তুমিও আমাদের সবার প্রিয়জন হলে, দেখো তোমার মনের কোনো দুঃখ নেই তো? দেখো তুমি এক সাথে কত গুলো বন্ধু পেয়ে গেলে। অনিফিশ জীবন টাই তাই।। ভালোবেসে সবাইকে আপন করে নেওয়া ..একটু ভালবাসা অনেক মজা আর কখনো থেমে না থাকা, এরই নাম জীবন "- পাপাঙ্গুলের কথা শুনে অনিফিশ আবেগ ভরে বলল - "তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড পাপাঙ্গুল।তাই শুনে পাপাঙ্গুলও খুব খুশী। এরপর সবাই মিলে খুব লাফালাফি আরআনন্দ করে নাচতে শুরুকরলো।

লেখা ও ছবিঃ
অনন্যা দত্ত
কলকাতা