ছোট্ট রবির সাথে
সেদিন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে সাজ সাজ রব। কারো এতটুকু নিশ্বাস ফেলার সময় নেই। কাজের লোক থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন সবাই তটস্থ...নিয়মের এতটুকু যেন এদিক থেকে ওদিক না হয়। সময়ের কাজ যেন সময়ে হয়...ফাঁকি দেওয়া...পড়ে থাকা কাজ মোটেই পছন্দ নয় মহর্ষি দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুরের। তাই সবকিছু হচ্ছে পরিপাটি নিয়ম অনুযায়ী। আর হবেই বা না কেনো? আজ তো ছোট্ট রবি এই প্রথম বাবার সাথে বাইরে বেরোবে। যাবে অনেক দূর...সেই হিমালয়। সকাল থেকে তাই রবির খুশি আর ধরে না। কোথায় বেঙ্গল একাডেমিতে একঘেয়ে ক্লাস আর কোথায় পাহাড় ঘেরা...সেই অনেক পুরোনো গাছের ছায়ায় রূপকথার পথ। যা এতদিন রবি শুধু গল্পই শুনে এসেছে।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
তুমি যেমন বাবার সাথে খুব লাফাই-ঝাঁপাই করো...কথায় কথায় বাবার ওপর রেগে যাও...বায়না করো...ছোট্ট রবির কিন্তু সেসব করার কোনো সুযোগই ছিলো না। বাবাকে সেতো কাছেই পায়নি কোনোদিন। বাবা থাকতেন বেশিরভাগ সময়টাই বাড়ির বাইরে, অনেক দূরে, পাহাড়ের কোলে। বাড়ি যখন ফিরতেন তখন ছোট্ট রবি কখোনো আড়াল থেকে আবার কখোনো বা লুকিয়ে বাবাকে দেখতো। তেতালার বারান্দাতে যেখানটায় অনায়াসে ছোটাছুটি করে খেলা যায়...সেখানেও খেলা বারণ হয়ে যেত রবিদের।
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি
সে যাই হোক আজ তো রবির আর একটুও দেরী করতে ইচ্ছে করছে না। কখন সে বাইরে বেরোবে? কখন সে ট্রেনে উঠবে? ট্রেনে উঠলে নাকি মানুষ ছিটকে যায়? এইসব ভাবনা তার মাথায় ভিড় করে আসে। কিন্তু তার এই উতকন্ঠা...আনন্দ সে যেন নিজের মনের মধ্যেই চুপ করে রেখে দেয়। খুব একটা কিছু বলতে পারে না। শুধু সেই দিনটার কথা মনে পড়ে যায়। সবে পৈতে হয়েছে, ন্যাড়া মাথা নিয়ে কিভাবে স্কুলে যাবে? কয়েকজনকে রবি এই প্রশ্নটা করেছে কিন্তু তেমন কোনো উত্তর পায়নি। কেউ চোখ বড় বড় করে শাসন করেছে আবার কেউ বা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছে সব কিছু। আর পৈতের আগেও তো কম ঝামেলা সহ্য করতে হয়নি, বৈদিক মন্ত্র রীতিমতো মুখস্থ করতে হয়েছে রবিদের। বেচারামবাবু রোজ এসে সেগুলো মুখস্থ করিয়েছেন। তাও নয় সহ্য করা গেছে কিন্তু এখন এই ন্যাড়া মাথা নিয়ে কি করে ফিরিঙ্গি বন্ধুদের মাঝে গিয়ে বসবে তাই ভেবে উঠতে পারে না রবি। এমন সময় একদিন তেতালায় বাবার ঘর থেকে ডাক আসে। খুব ধীর পায়ে রবি গিয়ে দাঁড়ায় শ্বেতশুভ্র পোষাকে আবৃত প্রায় ধ্যানস্থ পিতার সামনে। মহর্ষি জিজ্ঞাসা করলেন রবি হিমালয়ে যেতে চায় কিনা।
হ্যাঁ...এই কথাটা যদি সে চিতকার করে বলতে পারতো তাহলে হয়তো সেদিন সে আরো বেশি খুশি হতো। রবির জন্য এই প্রথম পোষাক বানানো হলো। যেমন তেমন নয় মখমলের কাজ করা জরির গোল টুপি, তার সাথে মানানসই জোব্বা আরো কতকিছু।
বেরোনোর আগে চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী বাবা বাড়ির সকলকে নিয়ে দালানে উপাসনায় বসলেন।
উপাসনা শেষে বাড়ির গুরুজনদের প্রণাম করে রবি বাবার সাথে ঘোড়ার গাড়িতে চেপে বসলো। মাঝে মাঝে টুপি খোলার চেষ্টা করেছিলো...কিন্তু বাবার আপত্তিতে তাকে সেটা মাথায় পরে বসে থাকতে হলো। ট্রেনে উঠে রবি একটুও ভয় পেলো না। ছিটকেও পড়লো না। তার হাসি পেলো, ট্রেনে চড়ার সেই আজগুবি গল্পের কথা মনে করে।
দুপাশ দিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে গাছ-গাছালি...ছোট্ট ছোট্ট সুন্দর গ্রাম...। রবি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। এর আগে তো মাকে ছেড়ে, বাড়ির দাদাদের ছেড়ে, অনেক দূরে রবি কোথাও যায়নি...কিন্তু একটুও মন কেমন করে না। বরং ভালো লাগে। সন্ধ্যার সময় তারা বোলপুরে নামে।
এর আগে এই বোলপুরের কথা রবি অনেকের কাছে শুনেছে। তার দাদারা, বৌদিরা এমনকি তার খুব কাছের বন্ধু সত্যও ঘুরে গেছে। পালকিতে উঠেই রবি চোখ বন্ধ করে। মনে মনে ভাবে সক্কালবেলা সে চোখ খুলবে...তাহলেই হয়তো সে দেখতে পাবে সেই পথটা যেখানে রোদ বৃষ্টি কিচ্ছুটি গায়ে লাগে না। অন্তত সত্যর লাগে নি। রবি যতক্ষণ চোখ বুঁজে আছে আর পালকিতে করে চলেছে ততক্ষণে চলো আমরা দেখি এই বোলপুরে হঠাত মহর্ষি তার ছেলেকে নিয়ে এলেন কেন।
আসলে এটা তাঁর খুব প্রিয় জায়গা ছিলো। ১২৬৯ বঙ্গাব্দের ১৮ ফাল্গুন প্রায় কুড়ি বিঘা জায়গা তিনি কিনে নেন । কিন্তু কেন কিনলেন? শোনা যায় এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় এখানকার একটা ছাতিম গাছের তলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ। হঠাতই তাঁর মনে এক অনাবিল পবিত্র আনন্দের সঞ্চার হয়। পরম ঈশ্বরে বিশ্বাসী দেবেন্দ্র নাথ এখানে একটি বাড়ি তৈরী করে নাম দেন শান্তিনিকেতন। পরে একটা উপাসনা গৃহ নির্মাণ করেন যেখানে সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের লোক এসে নির্জনে উপাসনা করতে পারবেন। মাঝে মাঝেই এখানে আসতেন মহর্ষি। ছোট্ট রবিকেও তিনি নিয়ে এলেন এখানে।
কিন্তু সত্যর গল্পের সাথে কোথাও যেন মিলছে না বোলপুর। কোথায় রাখাল? কোথায় সেই বিস্তৃত ধান ক্ষেত। যেখানে বসে সত্য ধান ক্ষেত থেকে ধান তুলে ভাত রান্না করে রাখালদের সাথে খেতো? রবি বুঝতে পারলো সে গুলো গল্প কথা। আসলে বোলপুর শুকনো জায়গা...সেই লাল পাথুরে মাটিকে কিছুক্ষণের মধ্যেই ভালো লেগে যায় ছোট্ট রবির।
সে চারিদিক ঘুরে বেড়ায়...আর কোথায় যেন প্রকৃতির সাথে...বাবার সাথে একটু একটু করে পরিচিত হতে থাকে সে। বাবা এইসময় ছোট্ট রবিকে অনেক অনেক দায়িত্ত্ব দেন। তাঁর সোনার ঘড়িতে দম দেওয়া, নিয়মিত পড়াশুনো করা, ঘুরে বেড়ানো...সবকিছু... সেটা যেন রবির নিজেরই দায়িত্ত্ব।
ভালো লেগে যায় রবির বোলপুর। শান্তিনিকেতন।
কোথাও যেন বাঁধাধরা নিয়মের গন্ডি নেই। বাবার সাথে প্রকৃতির পাঠ নিতে নিতেই কি রবির মনে হয়েছিলো যে স্কুলের পড়া থেকে এই পড়া অনেক অনেক ভালো। যেখানে গাছ তার নিবিড় ছায়া দিলো, পাখি দিলো সঙ্গ... প্রকৃতি মেলে দিলো তার সবুজ আঁচল। ছোট্ট রবি যেন বিশ্ব দীক্ষায় দিক্ষীত হলো। নতুন করে চিনতে শিখলো সে সব কিছু।
এরপর সে যখন অনেক বড় হলো। লোকে যখন তাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে চিনতে শুরু করলো...তার গান শুনে, লেখা পড়ে লোকে যখন তাকে ভালো বাসলো তখন তিনি শান্তিনিকেতনে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করলেন। সেই বিদ্যালয় একটা সময় তার ডালপালা মেলে অনেক বড় হলো। ১৯২১ সালের ২২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো বিশ্বভারতীর।
রবির ইচ্ছায় প্রকৃতির পাঠশালায় সবাই শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করলো। শুধু পাঠ্য বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে থাকা নয় এখানকার ছেলেমেয়েরা শিখলো গান গাইতে, ছবি আঁকতে, নাচতে, হাতের কাজ করতে।
একদিন কলকাতায় নিজের বাড়ির গন্ডি টপকিয়ে যে ছোট্ট ছেলেটি বাবার হাত ধরে বোলপুরে এসেছিলো...সেই একদিন গোটা বিশ্বের কাছে তাকে পরিচিত করালো। ভারতের এক অন্যতম সাংস্কৃতিক পিঠস্থান হয়ে উঠলো বিশ্বভারতী।
যদি কখোনো তুমি শান্তিনিকেতনে যাও...গাছের সারির মধ্যে দিয়ে হাঁটো...দেখবে নানান ফুল তোমাকে ঘিরে ধরছে...অনেক পুরোনো পুরোনো গাছ তোমাকে সেই লাল মাটির রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার নিমন্ত্রণ জানাচ্ছে...যে পথ দিয়ে একদিন ছোট্ট রবি তার বাবার সাথে হেঁটেছিলো।
লেখা ও ছবি
কল্লোল লাহিড়ি
অন্যান্য ছবিঃ
ইন্টারনেট
- বিস্তারিত
- লিখেছেন কল্লোল লাহিড়ী
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
নববর্ষের উপহার
এই নববর্ষে, ইচ্ছামতী তোমার জন্য এনেছে নতুন উপহার - প্রখ্যাত শিল্পী রেবন্ত গোস্বামী তোমার জন্য এঁকে দিয়েছেন একটা মজার মোরগ এর ছবি। এই মোরগের ছবিটিকে ডাউনলোড করে প্রিন্টআউট নাও, আর ভরিয়ে ফেলো তোমার পছন্দমত রঙে।
আরো মজার জিনিষ আছে। তোমাদের জন্য রইল কতগুলি মজাদার ছবি। ভালো করে দেখ, এই ছবিগুলির মধ্যে, কেমন করে চেনাজানা কতগুলো শব্দ, অন্যরকম মানে নিয়ে ফেলে।
একটু ভাবো, আর আমাকে লিখে পাঠাও এরকম আরো নানা শব্দ যেগুলি দিয়ে মজার ছবি আঁকা যায়। অথবা তুমি নিজেও এঁকে ফেলতে পারো এইরকম মজাদার ছবি, আর পাঠিয়ে দিও আমাকে।
চাষ-বাস
চাঁদের-বুড়ির-চুল
মাছ-রাঙা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সৃজন বিভাগ
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
প্রথম পাতাঃগ্রীষ্ম সংখ্যা ২০১০
শুভ নববর্ষ! শুভ নববর্ষ !! শুভ নববর্ষ !!!
শুভ ১৪১৭। ভালো আছ তো? -ইচ্ছামতী আর চাঁদের বুড়ির তরফ থেকে তোমার জন্য প্রথমেই রইল নববর্ষের অনেক ভালবাসা। ভাবছো, পয়লা বৈশাখ তো কবেই চলে গেছে, আর চাঁদের বুড়ির এতদিন পরে মনে পড়লো শুভেচ্ছা জানানোর কথা? আহা...আমি জানি, একটু দেরি হয়ে গেছে, কিন্তু তাতে কি? বাংলা নতুন বছরে তোমার সঙ্গে এই তো প্রথম দেখা হল, তাই না?
কি, একটু একটু রেগে আছো নাকি ? ভাবছিলে তো, চাঁদের বুড়ি নির্ঘাত ভুলেই গেছে নিশ্চয়...যে ইচ্ছামতীর নতুন সংখ্যা আসার সময় হয়ে গেছে? সেই কত্তদিন আগে শীত সংখ্যা নিয়ে এসেছিল, তারপর শীত গিয়ে বসন্তকাল কখন ফুরুত করে চলে গেল, আর প্রচন্ড রেগেমেগে এসে গেল প্রখর গ্রীষ্মকাল। সূর্য্যিঠাকুর দক্ষিণ দেশ থেকে বেড়িয়ে ফিরে চলে এলেন, উত্তরের আঙ্গিনায় দিন বড় আর রাত ছোট হয়ে গেল, অথচ ইচ্ছামতীর প্রথম পাতায় এখনও শীতের বরফঢাকা ঠাণ্ডা পাহাড়ের ছবি ! আর এদিকে গরমে সবার হাঁসফাঁস অবস্থা - ভোর না হতেই চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে সূর্যের উজ্জ্বল আলোয়, বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে গরম, কোথাও বা দরদরে ঘামে ভিজে যাচ্ছে শরীর, কোথাও বা বইছে গরম 'লু'...শুকিয়ে যাচ্ছে বারান্দার কোনে লতিয়ে ওঠা নরম অপরাজিতার চারাটা, ঝলসে যাচ্ছে ক্রোটোনের রংবেরঙের পাতাগুলি...
সারাদিন চোখ রাঙ্গিয়ে পৃথিবীকে বকুনি-টকুনি দিয়ে সন্ধ্যের দিকে সূয্যিঠাকুর পাটে গেলে তবেই যেন একটু শান্তি নেমে আসে...তখন দক্ষিণের থেকে সমুদ্দুর পাঠিয়ে দেয় ঠাণ্ডা ঠান্ডা দখিনা হাওয়া, জুড়িয়ে দেয় পৃথিবীর বুক। সারাদিনের ক্লান্তিতে শ্রান্ত পৃথিবী তখন গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়ে তারাভরা ঘন নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে। আকাশকে ডেকে বলে - ও আকাশ, মেঘের দেশে খবর পাঠাও...সূ্য্যিঠাকুরের রাগ কমাতে হবে তো...তাই শুনে আকাশ তড়িঘড়ি খবর পাঠায় মেঘের দেশে...তার খবর পেয়ে মেঘ রাজা এক বিকেলে পাঠিয়ে দেয় ধূসরকৃষ্ণ মেঘসৈন্যদের...তারা দুন্দুভি-দামামা বাজিয়ে ছেয়ে ফেলে আকাশ, ঝলসিয়ে দেয় বিদ্যুতের চকচকে ফলা, ঢেকে দেয় সূর্য্যকে, শুকনো তৃষিত পৃথিবীর বুকে ঢেলে দেয় ঠাণ্ডা জল, তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে ঝড়ের রানী কালবৈশাখি...
দেখ একবার... আমাদের কেন দেরি হল, সেই গল্প করতে গিয়ে করে ফেললাম গ্রীষ্মের সাতকাহন! আসলে সূ্য্যিঠাকুরের রাগের প্রকোপে আমাদেরও একটু হাঁসফাস অবস্থা। আর তাই, ইচ্ছামতীকে সাজিয়ে গুছিয়ে তোমার কাছে নিয়ে আসতে গিয়ে আমি একেবারে ঘেমে-নেয়ে একসা হয়ে গেছি...যাকগে, আর কথা না বাড়িয়ে , আমি বরং তোমাকে জানিয়ে দিই, এই সংখ্যায় তোমার জন্য কি কি থাকছে। এই সংখ্যায় থাকছে চারটে নানা স্বাদের গল্প, অনেকগুলি ছড়া; থাকছে আইভরি কোস্টের বাসিন্দা আলির গল্প; শীত -গ্রীষ্মের নানান তথ্য; গ্রীষ্মের চিঠি; আর থাকছে নববর্ষে তোমার জন্য কিছু মজাদার উপহার।
আচ্ছা বলতো, বৈশাখ মাসটা কি আমাদের কাছে শুধুমাত্র নববর্ষের জন্যই পরিচিত? নাকি বাংলা বছরের প্রথম মাস বলে? না, শুধুমাত্র এই দুটো কারণের জন্য বৈশাখ আমাদের কাছে এত পরিচিত মাস নয়। এই মাস আমাদের কাছে অনেক বেশি পরিচিত একটা বিশেষ দিনের, বিশেষ তারিখে জন্য। এতক্ষণে তুমি নিশ্চয় বুঝে গেছ কোন দিনের কথা বলছি। হ্যাঁ, পঁচিশে বৈশাখ হল সেই বিশেষ দিন। সেইদিন আপামর বাঙালির মনের মানুষ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। ইংরাজি ১৮৬১ সালে ৭ই মে ছিল বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫শে বৈশাখ। এই ২০১১ সালে আমরা তাঁর জন্মদিনের ১৫০ বছর পালন করছি।ভাবো তো, একজন মানুষ, কত বিশাল মাপের হলে, কত ভালবাসার জন হলে, তাঁর জন্মদিন একশো বছরেরও বেশি সময়ে ধরে, সারা দেশ জুড়ে পালন করা হয়...। শুধু তাই নয়, তাঁর লেখা বই 'সহজ পাঠ' স্কুলে ছোটদের বাংলা ভাষা শেখানোর জন্য পড়ানো হয়; তাঁর লেখা অগুন্তি গল্প-কবিতা-উপন্যাস-প্রবন্ধ সব বয়সের মানুষকে নতুন ভাবনা-চিন্তার খোরাক যোগায়; শুধু কি এই? তাঁর লেখা গান, আমাদের জীবনের প্রতি মূহূর্তের সাথী; সকালের প্রার্থনা হোক, বা উতসবের সন্ধ্যা, রবি ঠাকুরের গান ছাড়া যে সবই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই সংখ্যার 'গ্রীষ্মের চিঠি'তে থাকছে এই রবি ঠাকুরের ছোটবেলার, তাঁর ভাবনা-চিন্তার, তাঁর হাতে তৈরি শান্তিনিকেতনের গল্প আর ছবি।
এই মে মাসে ২ তারিখে আমাদের আরেক মনের মানুষ সত্যজিত রায়ের জন্মদিন। তাই এই সংখ্যার 'ছবির খবর' বিভাগে থাকছে অপুর গল্প। পড়ে দেখ কিন্তু।
সত্যজিত রায়
থাকছে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী রেবন্ত গোস্বামীর আঁকা আর লেখা; আর থাকছে জনপ্রিয় শিশু-সাহিত্যিক সুনির্মল চক্রবর্তীর লেখা বিদেশি রূপকথা।
চিঠির শুরুতে তোমাকে বলছিলাম মেঘ, বৃষ্টি, কালবৈশাখির গল্প, সূর্য্যিঠাকুরের রেগে যাওয়ার গল্প... এদিকে কিছুদিন আগে পৃথিবী নিজেই যে একটু একটু রাগ দেখাতে শুরু করেছে, সে খবরটা তো তুমি শুনেছ নিশ্চয়...এইয়াফ্যাতলাওকুল (Eyjafjallajokull ) নামের আইসল্যান্ডের সেই আগ্নেয়গিরি, যার ভেতর থেকে মাত্র কয়েকদিন আগে এত লাভা এবং ছাই বেরিয়েছে, যে, সেই ধূসর ছাই কয়েক হাজার ফুট উপরে উঠে গিয়ে ঢেকে ফেলেছিল ইউরোপের অনেকখানি আকাশ। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিমানের উড়ান বন্ধ হয়ে গেছিল। এখনও বহু যাত্রী তাদের ঘরে ফিরতে পারেননি, আইসল্যান্ডের বহু খামারের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে, এবং এই পরিস্থিতি আরো বেশ কিছুদিন চলতে পারে। এই ছাই ভরতি মেঘের কারনে পরিবেশের ভারসাম্য ও নষ্ট হতে পারে।
এইয়াফ্যাতলাওকুল
এইরকম একটা ঘটনা যখন ঘটে, তখন যেন আমরা নতুন করে, আবার করে বুঝতে পারি, প্রকৃতি মা কতটা শক্তিশালী; তার আঙ্গুলের এক টোকায় ভেঙ্গে পড়তে পারে বিশাল হিমবাহ; তার হালকা ফুঁয়ে উঠতে পারে প্রবল জলোচ্ছ্বাস; সে নড়ে উঠলে জেগে উঠতে পারে আগ্নেয়গিরি। কিন্তু তাই বলে প্রকৃতিকে ভয় পেলে চলবে না। বরং প্রকৃতিকে ভালবাসতে হবে। আগামি ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। তুমি কি ভেবে দেখেছ, কিভাবে তুমি তোমার পরিবেশকে সুন্দর রাখতে পারো, প্রকৃতিকে ভালোবাসতে পারো?
আমি বরং আমার কথা এবার শেষ করি। আর তুমিও বসে পড় ইচ্ছামতীর সাথে, জমিয়ে আনন্দ ভাগ করে নিতে।
ভাল থেকো।
চাঁদের বুড়ি
২১ বৈশাখ ১৪১৭
৫ই মে,২০১০
ছবিঃ উইকিপিডিয়া
- বিস্তারিত
- লিখেছেন চাঁদের বুড়ি
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত