প্যারীবাবুর ফার্স্ট বুক
এবারে যে বইটা নিয়ে বলব সেটার কথা শুনলে তুমি অবাক হয়ে যাবে। আমি কিছুদিন আগে ইচ্ছামতীর লাইব্রেরিতে ঘুরতে ঘুরতে এই বইটা দেখেছি। আগে বইটার মলাটের ছবি দেখ।
এটা একটা পাতলা মত বই, বেশ রংচঙে করে ছাপা। এই বইটার লেখক শ্রী প্যারী চরণ সরকার। আর বইটা কবে লেখা হয়েছিল জান? সেই-ই ১৮৪৫ সালের কাছাকাছি! আর কেন লেখা হয়েছিল জান? একটু বলি গল্পটা।
প্যারীচরণ সরকার ছিলেন সেইরকম একজন মানুষ, যিনি প্রথম বৃটিশ শাসিত বাংলার মানুষদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। কলেজের পড়াশোনা শেষ করে তিনি বারাসতের এক স্কুলে প্রধাণ শিক্ষকের দায়িত্ব পান। সেখানে পড়াতে গিয়ে দেখেন, এদেশীয় ছাত্রদের জন্য ঠিকঠাক ইংরেজি শেখার বই নেই। তখন তিনি নিজেই লিখে ফেললেন 'ফার্স্ট বুক অফ রিডিং ফর নেটিব চিলড্রেন'। পরে তিনি এর দ্বিতীয় ভাগ ও লিখেছিলেন। আর শুধু লেখেন নি, নিজে সেই বই ছাপাতেনও। উত্তর কলকাতায় এখনো রয়েছে তাঁর সেই বাড়ি এবং ছাপাখানা, যদিও জরাজীর্ণ অবস্থায়।
এই বই কে না পড়েছেন? স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ নিজে ছোটবেলায় পড়েছেন এই বই। আর এই বই তাঁর খুব পছন্দের বই ছিল। একটু পুরনো গল্প-উপন্যাস পড়লেই তুমি 'প্যারীবাবুর ফার্স্ট বুক' অবধি পড়াশোনা করেছে...এইরকম বর্ণনা পেতে পার। সেই ফার্স্ট বুক হল এই বই।
কি আছে এই বইতে? ইংরেজি ভাষা উচ্চারণ বিধির একেবারে গোড়ার নিয়মকানুনগুলি লেখা আছে এই বইতে। অতি সহজ সরল ভাষায়। যদি তোমার নিজের ইংরেজি ভাষা শেখার ব্যাপারে সমস্যা থাকে, অথবা এমন কাউকে জান তুমি, যে সহজে ইংরেজি ভাষার উচ্চারণ শিখতে পারছে না, তাহলে কোন চিন্তা না করে কিনে আন এই বই। আর পড়াশোনার জন্য যদি দরকার নাও হয়, তাহলে শুধুমাত্র সংগ্রহ করে রাখার জন্যেও এই বইটার এক কপি নিজের কাছে রাখাই যায়।
প্যারীচরণ সরকারের ফার্স্ট বুক হয়ত আজকাল আর কোন স্কুলে পড়ানো হয়না । কিন্তু তাঁর লেখা এই বই এর একটা কবিতা এখনো অনেকে মুখস্থ রেখেছেন, আর ছোটদের মুখস্থ করান। সেটা হল এইরকমঃ
Thirty days have September,
April, June and November,
February has Twenty -Eight alone,
And the rest have thirty-one.
কোন মাসে কত তারিখ, মনে রাখার কত সহজ উপায়, তাই না?
ফার্স্ট বুক অফ রিডিং
আনন্দ পাবলিশার্স
ষাট টাকা
(কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ এই রচনার অনেক তথ্য নেওয়া হয়েছে রোববার পত্রিকা থেকে। )
- বিস্তারিত
- লিখেছেন বইপোকা
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
দ্য সিক্রেট ওয়ার্ল্ড অফ অ্যারিয়েটি
শন নামে এক ছেলে। সে খুব অসুস্থ। কিছুদিন পরেই তার খুব বড় একটা অপারেশন হবে। মাঝের কদিন সে তার মায়ের শহরতলির বাড়িতে থাকতে আসে। বাড়ি ঢোকার সময়ে সে দেখে বিড়ালটা যেন কি একটা ছোট্ট জিনিষকে ঘাসঝোপের মধ্যে তাড়া করছে। কিন্তু ঠিক সেই সময়ে একটা কাক এসে বিড়ালটার সাথে মারামারি শুরু করে দেয়, তার তার ফলে বিড়ালটা সেখান থেকে পিঠটান দেয়। শনের মনে হয় ঝোপের আড়ালে সে এক ঝলক যেন দেখতে পেয়েছে একটা ক্ষুদে আকারের মেয়েকে।
হ্যাঁ, সে কিন্তু ঠিকই দেখেছিল। সেই আঙুল সমান মেয়েটার নাম অ্যারিয়েটি। সে ঐ টুকু দেখতে হলে কি হবে, সে কিন্তু আসলে প্রায় শনেরই সমবয়সী। সে তার বাবা-মায়ের সাথে শনেদের বাড়ির ভিতের নিচে থাকে। সেখানে রয়েছে তাদের সাজানো গোছানো ছোট্টখাট্টো সংসার। তার সাথে থাকেন তার বাবা -মা।
কিন্তু এই ক্ষুদে মানুষেরা পেট চালানোর জন্য কি করে? - তারা মানুষদের থেকে 'ধার' করে বা ঋণ নিয়ে জীবন যাপন করে। তাই এক কথায় তাদের বলা যেতে পারে ধারী, বা ঋণকারী , বা ইংরেজিতে borrower। যেমন, শনেদের রান্নাঘর থেকে তারা ধার করে একটা মাত্র চিনির কিউব। অথবা একটুখানি টিস্যু।
ক্রমে শনের সাথে আলাপ হয় অ্যারিয়েটির। এদিকে শনের বাড়ির পরিচারিকা, হারু, যে কিনা আগে থেকেই সন্দেহ করত অ্যারিয়েটিদের অস্ত্বিত্ব সম্পর্কে, সে একদিন সত্যি তাদের খোঁজ পেয়ে যায়।
তারপরে কি হয়, সেটা জানতে হলে তো দেখতেই হবে জাপানি পরিচালক হিরোসামা ইয়োনেবায়াশির পরিচালনায় তৈরি অ্যানিমেশন ফিল্ম -' দ্য সিক্রেট ওয়ার্ল্ড অফ অ্যারিয়েটি '। ইংল্যান্ডের প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক মেরি নর্টন ১৯৫২ সালে লিখেছিলেন জনপ্রিয় ফ্যান্টাসি উপন্যাস 'দ্য বরোয়ার্স' সেই উপন্যাস অবলম্বনে, হায়াও মিয়াজাকির চিত্রনাট্য নিয়ে তৈরি হয় এই ছবি, ২০১০ সালে। জাপানের স্টুডিও ঘিবলি এটা প্রথমে তৈরি করে জাপানি ভাষায়। পরে ছবিটিকে ইংরেজি ভাষায় ডাব করা হয়।
মহাশ্বেতা রায়
পাটুলি
- বিস্তারিত
- লিখেছেন মহাশ্বেতা রায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
সাঁওতাল বিদ্রোহ
“বৃষ্টি ভেজা কত সন্ধ্যায় মোরা ক’জনে
হেঁটেছি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা এই আমরা
রাজপথের আকাশচুম্বিগুলো ছাড়িয়ে
স্তব্ধতার সুর খুঁজে ফিরেছি আমরা…
স্মৃতি,সবই স্মৃতি…”
পরশপাথর
জানো, এই লাইনগুলো আমার বড় হয়ে ওঠার সময়ের প্রিয় কয়েকটা। আজ অবশ্য ইন্টারনেট, কম্পিউটার, মোবাইল ফোনের যুগে শহুরে অবসর এভাবে কাটানো সময় নষ্টেরই নামান্তর। 3G থেকে 4G network transition period-এ কিশোরদের কাছে এই বিনোদন হাস্যকর।তুমি ঠিক বুঝবে না, বৃষ্টিতে ভিজে সারা গায়ে কাদা মেখে ফুটবল খেলার আনন্দ কি! বৃষ্টি এখন শুধু জানলা দিয়ে দেখতে হয়।একটু ভিজলেই পরদিন নাকের জলে জেরবার।জ্বর, স্কুল কামাই, ডাক্তার বাবুর সার্টফিকেট, তবে পরদিন ক্লাসে বসতে দেবে। বাব্বা !!!!! তার থেকে বৃষ্টি স্বপ্নই থাক।ভেজার অনাবিল আনন্দ তোমার জন্য নয়। প্রকৃতির সঙ্গে মিশে স্বাধীন হওয়ার দিন শেষ।তুমি এখন এমন একজন যার সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক শুধু পড়ার বই-এর মাধ্যমে। প্রকৃতি তোমার দোরগোড়ায় ধরা দিলেও তোমার সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরী করার সময় বা সুযোগ কোনোটাই তোমার কাছে নেই।সেই অধিকার তুমি অনেকদিন আগেই হারিয়েছ।
জান, প্রকৃতির সঙ্গে একসময়ে মিশে থাকত সাঁওতালরা। সরল আদিবাসী সাঁওতালরা ছিল সত্যিই অরণ্যের সন্তান। বনের শ্যামলিমার সহজাত সৌন্দর্য দিয়ে ঘেরা তাদের জীবন। না তারা কোনোদিন বাইরের কোনো সমজের ওপর কর্তৃত্ব করতে চেয়েছে, না তাদের ওপর বাইরের কোনো শক্তি কর্তৃত্ব করার চেষ্টা করেছে। তাদের অধিকারে মুঘল-পাঠান আমলেও কেউ হস্তক্ষেপ করতে চায় নি।
কিন্তু অত্যাচারী ইংরেজরা তাদের আর শান্তিতে থাকতে দিল না।ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অর্থলালসায় সাঁওতালদের জীবনযাত্রার সহজ-সারল্য আর তাদের সংস্কৃতির অনার্দৃত বিকাশের ধারাটি ধর্মভ্রষ্ট হয়ে গেল।সুদের চক্রবৃদ্ধি হারের জালে এদের চিরকাল বেঁধে ফেলল দাস-শ্রমিক হিসেবে। নিজেদের বাসভূমিতে এরাই হয়ে উঠল পরবাসী। না জমি, না জীবিকা। সঙ্গে আদিবাসী জীবনের সহজ সারল্য প্রকাশের কোনো অবকাশ নেই। ফল হল, তাদের পিঠ ঠেকল কুটিরের দেওয়ালে।ক্ষুধার্ত, ক্লিষ্ট, অপমানিত সাঁওতালরা মুক্তির পথ হিসেবে বাধ্য হল হাতে অস্ত্র তুলে নিতে।স্বাধীন সত্তাকে রক্ষা করতে, নারীর সম্মান বাঁচাতে, মানুষের মত বাঁচতে হলে সংগ্রামে সামিল হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় তাদের ছিল না।
ঔপনিবেশিক ইংরেজরা আদিবাসীদের মানুষ বলে গণ্য করত না।তাদের প্রসাদপুষ্ট জমিদার, দারোগা-পুলিশ, আমলা, মহাজন, ব্যবসায়ীরা এদের শোষণ করেই নিজের পরিপুষ্টি সাধনেই ব্যস্ত ছিল।এই অন্যায়-অবিচারের বিরূদ্ধে সাঁওতালরা মাথা তুলে দাঁড়াল দুই ভাই সিদহো-কানহু-র নেতৃত্বে। এঁদেরকে আমরা সিধু-কানহু বলেই জানি।
সিপাহী-বিদ্রোহের দুই বছর আগের ঘটনা। সাঁওতাল পরগণার ভাগনাদিহি গ্রামের মাঠ।১৮০৫ সালের ৩০শে জুন তারিখে এই অন্যায় শোষণের বিরূদ্ধে দশহাজার সাঁওতালকে অস্ত্র ধরতে ডাক দিল সিধু-কানহু। এরাই ছিল সবথেকে ব্যাপক সাঁওতাল বিদ্রোহের সংগঠক, আর ভাগনাদিহির সেই মাঠই ছিল সেই রণক্ষেত্র।সিধু-কানহু-র সামনে সমবেত দশহাজার সাঁওতাল সেদিন শপথ নিয়েছিল, তাদের বাসভূমি থেকে সমস্ত অত্যাচারীদের বিতাড়ণের।
শুরু হল সংঘর্ষ। ইংরেজ পুলিশ –বাহিনী-র নেতৃত্বে ছিলেন এক দারোগা।লড়াই-এ ঐ দারোগা নিহত হন।সাঁওতাল জাগরণের এই দৃশ্য দেখে গ্রামের সাধারণ মানুষ – তাঁতী, কামার, কুমোর, চর্মকার, তিলি সকলেই তাদের পাশে এসে দাঁড়াল।কারণ তারাও সকলে একই ভাবে অত্যাচারীত ও শোষিত।সিধু-কানহু-র নেতৃত্বে এক বিশাল সাঁওতালবাহিনী কলকাতার দিকে অভিযাত্রা শুরু করল। অত্যাচারীদের দূর্গ ধূলিসাৎ করে দেওয়াটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।কুখ্যাত অত্যাচারী পুলিশ অফিসার মহেশ ‘ত নিহত হল। একদল সৈন্য নিয়ে মেজর বারোজ বিদ্রোহীদের গতিপথ রোধের চেষ্টা করেন। তিনিও ব্যর্থ ও পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান।বীরভূম, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ সহ বিহারের একটা বড় এলাকা সাঁওতালদের করায়ত্ব হয়। ১৮৫৫ সালের ১৬ই জুলাই ইংরেজ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন বাহিনীকে পরাজিত করে সিধু-কানহু সাঁওতালদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে।
দুই ভাইএর পরিকল্পনা ছিল সাঁওতালদের জন্য একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। শোষণমুক্ত পরিবেশে যাতে গরীব সাঁঊতাল কৃষক-শ্রমজীবি মানুষ বাস করতে পারেন, এটাই ছিল তাঁদের স্বপ্ন এবং তা বাস্তবায়ীত করার জন্যই ছিল এই বিদ্রোহ ও সশস্ত্র সংগ্রাম।পঞ্চাশ-হাজার সাঁওতাল অনুগামী নিয়ে সিধু-কানহো মহেশপুর নামে একজায়গায় ইংরেজবাহিনীর গতিরোধ করেছিল।
ইংরেজ শাসকেরা সাময়িকভাবে এই বিদ্রোহের তীব্রতা দেখে হতচকিত হয়ে গেলেও সমস্ত শক্তি দিয়ে চূড়ান্ত আঘাতের প্রস্তুতি নিতে দেরী করে নি। বিদ্রোহ দমণ করতে ইঙ্গরেজ শাসকেরা গোটা এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। সিধু-কানহু-কে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য তখনকার দিনে দশহাজার টাকা মাথা পিছু ইনাম ঘোষণা করে ইংরেজ সরকার। মহেশপুরের যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত সাঁওতালরা পিছু হঠতে বাধ্য হয়। বীরভূম থেকে সরে গিয়ে সিধু-র বাহিনী সাঁওতালপরগণায় চলে যায় প্রতিরোধ প্রস্তুতির জন্য। ইংরেজরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সাঁওতালপরগণায় প্রবেশ করে। পাকুড় রাজপ্রাসাদ সিধুর বাহিনী দখল করে নেয়। ইংরেজরা ভয় পেয়ে পাকুড় দুর্গে আশ্রয় নিয়েছিল। পাল্টা অভিযান চালিয়ে ইঙ্গরেজ বাহিনী এক বিশ্বাসঘাতকের সাহায্যে সিধু-র গোপন আস্তানার সন্ধান পায় এবং তক্ষুনি তাকে ধরে গুলি করে হত্যা করে।
এই বিদ্রোহ দমনের জন্য ১৮৫৫ সালের নভেম্বরে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম থেকে শুরু করে বিহারের ভাগলপুর পর্যন্ত গোটা এলাকা ইংরেজ শাসকরা সেনা বাহিনীর ওপর ছেড়ে দেয়। চরম সন্ত্রাস ও বর্বর প্রতিশোধের নগ্ন দৃষ্টান্ত স্থাপণ করে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বেতনভুক সেনাবাহিনী।১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের সময় পর্যন্ত সাঁওতালদের অভ্যুত্থান স্থায়ী হয়েছিল। আদিবাসী সাঁওতাল এই বিদ্রোহের পতাকা উত্তোলন করে বাংলার বুকে এক অবিস্মরনীয় ও গৌরবময় আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছে। বাংলার মানুষ আজও তা বিনম্রচিত্তে স্মরণ করে।
কলকাতার ধর্মতলায় গিয়েছ কোনোদিন? বিশাল এক রাস্তার নাম রাখা হয়েছে ‘সিধো-কানহো ডহর’ – সাঁওতাল বিদ্রোহের বীর ভ্রাতৃযুগলের স্মৃতির প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধাঞ্জলী।
আর্য চ্যাটার্জি
কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন আর্য চ্যাটার্জি
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
তিন বোকার গল্প
এক গ্রামে ছিল তিন বোকা। তারা বোকা বলে বোকা, একেবারে বোকার হদ্দ। তাদের বাড়ির লোকজন একদিন তিনজঙ্কেই একসাথে গ্রাম থেকে বের করে দিল। বেচরা বোকা তিনজন গ্রামের বাইরে এসে একটা বড় ছাতিম তগাছের ছায়ায় এসে বসল। তারপর তিনজন মিলে ঠিক করল তারা দূর দেশে চলে যাবে।
সেইমত তিন বোকা নদী-নালা-মাঠ পেরিয়ে নতুন এক গ্রামে গিয়ে হাজির হল। নতুন গ্রামে এসে তারা একটি বেশ বড় সড় বাড়ি দেখতে পেল। তিন বোকা খোঁজ নিয়ে জানতে পারল সেটা এক মাষ্টারমশাইয়ের বাড়ি। মাষ্টারমশাই ঠিক তখনই স্কুল যাবার জন্য তৈরি হয়ে বেরোতে যাচ্ছিলেন। এমনসময় তিন বোকা তাঁর পায়ে পড়ে পা চেপে ধরল। মাষ্টারমশাই বললেন, ওরে ছাড় ছাড়, স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে। বোকা তিনজন তবু পা ছাড়ে না। বলল, মাষ্টারমশাই আমরা ভিন-গাঁ থেকে এসেছি। আমাদের আপনি একটা ব্যবস্থা করে দিন।
মাষ্টারমশাই বললেন, আচ্ছা আচ্ছা। সব ব্যবস্থা ফিরে এসে হবে। বাড়িতে মা রয়েছে। তোরা তার কাছ থেকে খাবার চেয়ে খেয়ে নিবি। তারপর বাড়িএ কিছু কাজকর্ম সেরে রাখবি। আমি ফিরে এসে তোদের ব্যবস্থা করব। এই বলে তিনি স্কুলের প্পথে হন্ হন্ করে হাঁটতে লাগলেন।
বোকা তিনজন বুড়িমায়ের কাছে পান্তা ভাত মুড়ি কাঁচা লঙ্কা মেখে পেট ভরে খেয়ে নিল। তারপর বলল, বলুন বুড়িমা কি কাজ করতে হবে? বূড়িমা বলল, যা তোরা নদীতে স্নান সেরে ঘানি থেকে তিন হাঁড়ি সরষের তেল নিয়ে আয়।
বোকারা সেইমত নদীতে স্নান সেরে তেল আনতে চলল। মাটির ছোট ছোট হাঁড়িতে তেল নিয়ে তারা বাড়ির পথে ফিরছে এমন সময় পথে দেখল একটা প্রকান্ড বট গাছ। সেই বট গাছের ছায়ায় বসে একটু জিরিয়ে নিতে তারা তেলের হাঁড়িগুলো মাটিতে রাখল। তারপর জিরিয়ে টিরিয়ে যেই হাঁড়িগুলোর দিকে তাকিয়েছে অমনি দেখে তিনটি হাঁড়িতেই চোর ঢুকে বসে আছে। আসলে হাঁড়ির মধ্যে ছিল তেল আর ঐ তেলেই তারা নিজেদের ছায়া দেখতে পেয়েছে। নিজেদের ছায়াগুলোকে চোর ভেবে তারা দুম দাম করে লাঠি দিয়ে পিটাতে লাগল। লাঠির ঘায়ে মাটির হাঁড়িতো ভাঙ্গলই সাথে সাথে তেলটাও গড়িয়ে পড়ল। অবশেষে তিন বোকা খালি হাতে বাড়ি ফিরে এল।
মাষ্টারমশাই সন্ধ্যেবেলায় বাড়িতে ফিরে সব কথা শুনে বলল, কাল তোরা তিনজন বনে গিয়ে তিন বোঝা শুকনো কাঠ নিয়ে আসবি, এটা পারবি তো ? বোকারা অনেকখানি ঘাড় কাত করে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ল।
পরদিন মাষ্টারমশাই স্কুলে চলে গেলে বোকা তিনজনও বনের পথ ধরল। তারপর তিনজন তিনটি বেশ বড়সড় কাঠের বোঝা মাথায় চাপিয়ে বুড়িমার কাছে ফিরে এল। বুড়িমা তখন খোলা পাতে মুড়ি ভাজছিল। গরমে তার মেজাজ ছিল সপ্তমে। আর ঠিক তখনই বোকা তিনজন চিৎকার জুড়ে দিল, কাঠ এনেছি, রাখবো কোথায় ? তিন বোকা একই কাথা বলায় বুড়িমা রেগে-মেগে বলল, কাঠ রাখার জায়গা পাচ্ছিস না ? আমার মাথায় রাখ। এই কথা শেষ হতেই বোকা তিনজন তিনবোঝা কাঠ বুড়িমার মাথায় ফেলে দিল আর তাতেই বুড়ি মারা গেল।
মাষ্টারমশাই ঘরে ফিরে দেখল অনর্থ হয়ে গেছে। কেন যে তিনি বোকাদের আশ্রয় দিলেন ? তারপর কান্না-কাটি থামিয়ে বোকাদের নির্দেশ দিলেন, যা তোরা মা-কে নিয়ে গিয়ে নদীতে সৎকার করে ফেল। এতে যদি তোদের কিছুটা পাপ কমে।
বোকারা তখন একটা তালপাতার চাটায়ের মধ্যে বুড়িমার দেহটা গুটিয়ে নদীতে নিয়ে চলল। যেতে যেতে কোনসময় বুড়ির দেহটা চাটাই থেকে বাইরে পড়ে গেছে তারা খেয়ালই করে নি। নদীতে পৌঁছে দেখল বুড়িমা নেই। কোথায় গেল ? বোকা তিনজন তখন ভাবল, বুড়িমা নিশ্চয়ই জ্যান্ত হয়ে কোথাও লুকিয়ে পড়ছে। তাই তারা বুড়িকে ধরে নিয়ে আসতে আবার গ্রামের পথে পা বাড়াল।
যেতে যেতে তারা অন্য একটি গ্রামে গিয়ে পৌঁছল। সেই গ্রামে একটি বুড়ি ঝাট দিয়ে উঠোন পরিষ্কার করছিল। বোকা তিনজন তাকে দেখতে পেয়ে হৈ হৈ করে এল। তারপর তাকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে সৎকার করে দিল।
সন্ধ্যায় বোকারা মাষ্টারমশাইয়ের কাছে এসে বলল, আজ আমাদের খুব পরিশ্রম গেছে। বুড়িমা তালপাতার চাটাই থেকে বেরিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। আমরা তাকে জোর করে ধরে নিয়ে এসে সৎকার করে দিয়েছি।
মাষ্টারমশাই বোকাদের কথা শুনে তো একেবারে হাঁ হয়ে গেলেন। অনেক হয়েছে। এরা শুধু বোকা নয়, একেবারে বোকার হদ্দ। এদের কিছুইতেই ঘরে রাখা যাবে না। রাখলেই পদে পদে বিপদ। এই ভেবে তিনি তাদের তাড়িয়ে দিলেন।
তিন বোকা আবার ভিন-গাঁয়ের পথে হাঁটতে লাগল।
(মানভূমের প্রচলিত লোককথা)
ছবিঃদীপায়ন সরকার
- বিস্তারিত
- লিখেছেন তরুণ কুমার সরখেল
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
পরবাসে : পর্ব ১- ডালাস ডায়েরি
সালটা ছিল ১৯৮৯ । মার্চ মাস ।
সুদূর ডালাসে পাড়ি দেওয়া হল । আমেরিকার দক্ষিণ পশ্চিমের টেক্সাস স্টেটে অবস্থিত ডালাস । বহু প্রতীক্ষিত বায়ুপথে ভ্রমণ..
বিমানবন্দর থেকে একে একে চোখের বাইরে চলে গেল মা, বাবা আর ভাইয়ের ছলছল চোখ ।
জীবনে প্রথম বায়ুপথে হারিয়ে যাওয়া । দমদম থেকে দিল্লী । সেখানে বন্ধুবান্ধবের সাথে গেটটুগেদার । মধ্যরাতে দিল্লী এয়ারপোর্টে গিয়ে আবার উড়ানে জার্মানি । সেখান থেকে আরো দূরে আটল্যান্টা ।
এয়ারপোর্টে ফ্রেস হয়ে বিধ্বস্ত জামাকাপড় বদল করে ছোট্ট এক ফ্লাইটে আটল্যান্টা থেকে সোজা ডালাস পৌঁছালাম বিকেলবেলায় । ইউটিডালাসের ম্যনেজমেন্ট স্কুলের পিএইচডি স্টুডেন্টরা সব এসেছে.. একপাল অপরিচিত মুখ সাদরে অভ্যর্থনা করল ডালাস এয়ারপোর্টে । ভারতীয় স্টুডেন্টদের একাধিক গরীব রথ বরণ করে ঘরে তুলছে আমাকে ... সে এক অভিনব অভিজ্ঞতা ।
অবশেষে পৌঁছলাম ডালাস ক্লিফব্রুক কন্ডোমিনিয়ামের এপার্টমেন্টে । ঘুমে তখন দুচোখ বুঁজে আসছে । অথচ বন্ধুদের হল্লা আর হুল্লোড়ের খামতি নেই । গরম ভাত থেকে শুরু করে পঞ্চব্যঞ্জন রেঁধে রেখেছে বাঙালী বন্ধু পত্নী । আমি তখন জেটল্যাগ সর্বস্ব । তবুও হাসিমুখে আলাপ পর্ব সেরে চলতে হল সকলের সাথে ।
আমেরিকার মাটিতে পা দিয়েই মনে হল ঈশ্বরের আশীর্বাদ ধন্য এই দেশ, কত সুন্দর সৌজন্যবোধ মানুষের, সুন্দরের সত্য পূজারী তারা, তারা কত রুচিশীল, সত্যিই তারা গড়তে জানে নিজেদের আর ভালবাসে তাদের দেশকে, রক্ষা করতে পারে ভগবানের সৃষ্টিকে, আর নিজেদের সৃজনশীলতাকে বিকশিত করে, উজাড় করে দিতে পারে বিশ্বের দরবারে;
তুমি বলবে কৃত্রিমতা এ শতাব্দীর অভিশাপ- কৃত্রিমতা যদি উন্নতি ঘটায় তাহলে বাধা কোথায়? বিজ্ঞান যদি কাজের বন্ধু হয় তাহলে আপত্তি কিসে ? সৃষ্টিসুখের উল্লাসে আমরা বাঁচিনা একটু সহজ করে, সাবলীল ভাবে!
প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য্যে, প্রাকৃতিক জলবায়ুর মিষ্টতায় সে দেশের মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে রোজ আমরা প্রণাম জানাতাম নিজের দেশমাতৃকাকে ।
এর মধ্যে দেশের মানুষগুলোর জন্য মন কেমন করলেই চিঠি লিখছি ফাঁকে ফাঁকে । তবে বেড়ানোর আনন্দে দখিনের খোলা জানলায় সব ওলটপালট । ফাগুণের ওমে শীত লুকোল শুকনোপাতায় । পলাশের হাসিতে শীত-ফুলেরা মুখ ঢেকেছে চুপিসাড়ে । শিমূল, অশোকের হট্টমেলায় ডালেডালে কাঁচা সবুজের ছোঁয়া । মাতাল বসন্তে রঙীন প্রকৃতি ।
ভোরবেলা কিচেনের ব্লাইন্ডস সরিয়ে ক্লিফব্রুক কন্ডোমিনিয়ামসের পার্কিং লটে তাকিয়ে থাকা সার সার গাড়ির ছাদে দুধসাদা বরফের চাদর ..তার সাথে সূর্যের আলোর মাখামাখি !
তারপর রোজ চোখ রেখেছি অপার বিস্ময়ে, কখনো ডালাস ডোমের মাথায় গরম কফি হাতে, টেক্সাস ও ওকলাহোমার বর্ডারে অসাধারণ টেক্সোমা লেকের জলের ধারে । কখনো টাইলার রোজ গার্ডেনের গোলক ধাঁধায়, কখনো নেচে উঠেছে প্রাণ টার্নার ঝোরার ধারে, গুহার ভেতর .. গেয়ে উঠেছে মুক্তির আনন্দে, নেচে উঠেছে ঝোরার জলের ছন্দে...
১।টার্নার ফল্স্, ২।টেক্সোমা লেক, ৩।ডালাস, ৪। টাইলার রোজ গার্ডেন
এল বি জে এক্সপ্রেস ওয়ের ওপর দিয়ে লং ড্রাইভে ছুটেছি কত কত বার আমার স্টুডেন্ট স্বামীর সেকেন্ডহ্যান্ড দুধসাদা মাজদা ৬২৬ গাড়িতে, হৈ হৈ করে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে উইকএন্ডট্রিপ !হঠাত প্ল্যান করেই "চলো লেটস গো" বলে বেরিয়ে পড়া আর কি !
প্রতি সপ্তাহান্তে এমন ছোটখাটো বেড়ানোর সাথে ছিল ভারতীয় বন্ধুমহলের কারোর একজনের বাড়িতে আয়োজিত পটলাক পার্টি । দারুণ আইডিয়া । বিদেশে এসে শিখেছিলাম । যার বাড়িতে পার্টি হবে সে ভাত/রুটি বানানোর দায়িত্বে থাকবে আর অন্যেরা যে যার ইচ্ছেমত ডিশ বানিয়ে আনবে । কেউ আবার পেপারপ্লেট, চামচ আর কোল্ডড্রিংক্সয়ের ভার নিত । দারুণ মজা হত এমন পার্টিতে । একঘেয়ে মেনু নয় কিন্তু পট লাক (potluck) অর্থাত কোন্ পটেতে কি আছে সেটা খাবার সময় খুলে দেখবার । আর সবচেয়ে বড় কথা হল যিনি পার্টির জন্য বাড়িতে সকলকে ডেকেছেন তাঁর ওপর অযথা চাপও পড়লনা ।
ডালাসে যেখানে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অবস্থিত তার নাম রিচার্ডসন । যেন শহুরে গ্রামের মাদকতা সেই অঞ্চলে ।
রথযাত্রা দেখেছিলাম ডালাসে । ডালাস থেকে অনেকটা দূরে ইস্কনের কালাচাঁদজীর মন্দিরে রথের রশি টেনে কিছুটা স্বদেশের জন্য ব্যাকুলতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম ।লুচি আর পাঁচমেশালী একটি তরকারী সহযোগে ভোগপ্রসাদও পেয়েছিলাম।
এরপর মনে পড়ে ৪ঠা জুলাইয়ের সেই লঙ উইকএন্ডের কথা । আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস । ডালাসের সাবার্বে একটি খোলা মাঠের ওপর বিকেল থেকে জমায়েত হল কয়েক হাজার মানুষ । তারপর সন্ধ্যের ঝুলে একে একে আকাশে ফুটে উঠতে লাগল রঙ বেরঙের ফায়ারওয়ার্কস । আতস বাজি, আলোর বাজি এত সুন্দর ভাবে পরিবেশন আর কোথাও দেখিনি । ব্যাবস্থাপনায় কোনো ত্রুটি নেই । সুষ্ঠুভাবে প্রায় তিন চার ঘন্টা বাজি পোড়ানো হল সেই মাঠের ওপর । কিন্তু কোনো বিশৃঙ্খলা চোখে পড়ল না । অথচ বৈচিত্র্যময়তায় ভরা সেই দীপাবলীর রাত যেন আনন্দে ভরপুর হয়ে উঠল । ফায়ারওয়ারক্স দেখে সে রাতের প্রোগ্রাম ছিল দল বেঁধে সকলে মিলে পিত্জা হাটে পিত্জা খেতে যাওয়া । তখন ভারতবর্ষে প্রবেশ করেনি পিত্জা হাট । তাই আমি অপার বিস্ময়ে গোগ্রাসে গিলেছিলাম সেই লোভনীয় ইটালিয়ান খাদ্য ।
সে ফাগুনের এক ভোরে আমরা প্ল্যান করে বায়ুপথে পাড়ি দিলাম ডালাস থেকে নিউইয়র্ক । আমেরিকার প্রেসিডেন্টের নামে জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্টে অবতরণ হল । কি ঝকঝকে এয়ারপোর্ট আর কেমন সুন্দর সব ব্যবস্থা । এখানে সব কিছুর মেন্টেন্যান্স দেখলে অপার মুগ্ধতায় তাকিয়ে থাকতে হয় । এমনটিই থাকে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ।
নিউইয়র্কে এক বন্ধুর বাড়িতে কিছুদিনের জন্য আস্তানা বেঁধে সারাটাদিনের জন্য যাওয়া হল ওয়াশিংটন ডিসি ।
একটা গাড়ি নিয়ে রাজধানী শহর ওয়াশিংটন ডিসির রাজপথে.. অর্থাত যা কিনা বর্তমান রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার অফিস । ১৯৮৯ এ সেই সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন জর্জ বুশ । হোয়াইট হাউস বা প্রেসিডেন্টের অফিসকে এখানে ক্যাপিটল বলে ( capitol)।
১। ওয়াশিংটন মনুমেন্ট, ২। ক্যাপিটল, ৩।ওয়াশিংটন ডিসি
ডিসির রাজপথ হোয়াইট হাউসের রাজকীয় শুভ্রতায় কি অসাধারণ শান্তিময়তা, বাইরের সবুজ লনে কি সুন্দর সজীবতা সাথে গেরুয়া মরশুমি ফুলের একরাশ উচ্ছ্বাস দেখে বিহ্বল হয়ে গেলাম ।
এই তিন রঙ মনে করিয়ে দিল আমার ধন্যধান্যপুষ্পে ভরা নিজের দেশের কথা । মনে মনে প্রনাম জানালাম ত্রিরঙা জাতীয় পতাকাকে।
ক্যাপিটল হিলের কাছে লিংকন মেমোরিয়াল চির শুভ্রতায় জ্বাজ্জল্যমান এব্রাহাম লিংকনের স্মৃতি নিয়ে । সেখান থেকে ন্যাশানাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে । সেই বহু বিতর্কিত এবং অভিশপ্ত হোপ ডায়মন্ড দেখে অবাক হতে হয় । ঘন নীল হীরে । কোনোদিনো দেখিনি এর আগে ।
১।লিঙ্কন মেমোরিয়াল, ২। ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ আর্ট, ৩। হোপ ডায়মন্ড
সাময়িক বাকরূদ্ধতা !
ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশানাল গ্যালারী অফ আর্ট এ এসে পৌঁছালাম । বহু প্রতিক্ষীত ভাবনালোকের রূপসাগর ..ডুব দিলাম সেই রূপসাগরে..
ইম্প্রেশানিস্ট, স্যুরিয়ালিস্টিক সবরকমের পেন্টিংয়ের সাথে হাতেখড়ি হল ! বিদেশের নামী সব শিল্পীর দামী সব তৈলচিত্র ।
মাতিস, রেনোয়াঁ, ক্লদ মনে, ভ্যান গঘ, পল গগ্যাঁ-র গল্পে মাত হয়ে গেছিল আর্ট গ্যালারির প্রতিটি করিডোর !
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হোল দ্য ভিঞ্চির আর এক বিরল সৃষ্টি দেখে যা মোনালিসার থেকে কোন অংশে কম নয় ।মোনালিসার হাসি নেই তাতে কিন্তু সেই ভয় মিশ্রিত গাম্ভীর্য্য..
অনবদ্য লাগল সেই আর্ট গ্যালারী পরিদর্শন । আরো চোখ জুড়িয়ে গেল ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা দেখে ।
বিদায়ের সময় মনে মনে বলে উঠলাম, বিদায় ওয়াশিংটন!
ডিসি তুমি দিগবসনা, সবুজ আঁচল শুভ্ররাজবেশে ছড়িয়ে দিয়েছো নীলের দিগন্তে , সৌন্দর্য তোমার অলংকার, রাজকীয়তা তোমার মজ্জাগত, নিয়ম শৃঙ্খলা তোমার সহজাত, বেঁচে থাকো ডিসি তোমার অমলিন স্বর্গীয় রাজকীয়তা নিয়ে, আর সর্বকালের অহংকার নিয়ে । রাজধানী হবার যোগ্যতা তোমার মধ্যে পূর্ণমাত্রায় ।
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত