১ - প্যারিসের মাটিতে নামবার আগে আকাশ থেকে যে দুটো মনুষ্য নির্মিত ইমারত চোখে পড়বে তার মধ্যে প্রথম হল স্বনামধন্য আইফেল টাওয়ার । দ্বিতীয় হল "লা ইনভালিডস"-এর সুবিশাল সোনালী গম্বুজ ।
২ - লা ইনভালিডস তৈরী হয় ১৬৭৯ সালে বৃদ্ধ বৃদ্ধা এবং আহত সৈনিকদের হাসপাতাল হিসেবে । পরবর্তীকালে এই খানেই স্থান পায়ে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট-এর সমাধি । রোমের সেন্ট পিটার'স ব্যাসিলিকা-র অনুকরণে তৈরী, "এগ্লিসে ডু ডোমে" নামেও পরিচিত এই কীর্তিস্তম্ভ ফরাসী baroque শিল্পের এক অনন্য উদাহরণ ।
৩ - মেরি ম্যাগডালীন-এর স্মৃতিতে বানানো এই চার্চ-এ বছরের ৫২ সপ্তাহের রূপক হিসেবে রয়েছে ৫২ টি স্তম্ভ ।
৪ - প্যারিস-এর ল্যুভর্ মিউসিয়ামের তলায়ে রয়েছে এই বিখ্যাত কাঁচের উল্টো পিরামিড যা এসে মিলছে এক ছোট্ট সোজা পিরামিড-এর মুখোমুখি । ড্যান ব্রাউন-এর উপন্যাস 'দা ভিঞ্চি কোড' -এ আমরা "ব্লেড অ্যান্ড চ্যালিস” নামে পরিচিত এই শিল্পকীর্তির উল্লেখ পাই আর তিনি কল্পনা করেছেন যে এই ছোট্ট পিরামিড টা আসলে মাটির নিচে আরেকটি পিরামিড-এর শিখরাংশ এবং এই নীচের পিরামিড এর ভেতরে আছে যীশু খ্রিষ্টের স্ত্রী মেরি ম্যাগডালীনের আসল সমাধি ।
৫ – ওবেলিস্ক ডে লাক্সার । ৩৩০০ বছর আগে এই ওবেলিস্ক মিশরে লাক্সার মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে শোভিত ছিল । মিশরের রাজা ফ্রান্স কে উপহার দেন ৫৫৫ ফিট উঁচু এই সুবিশাল ওবেলিস্ক । ভাবতেই অবাক লাগে, তখনকার যুগে কি করে নিয়ে আসা হয়েছিল এই সুউচ্চ প্রস্তর নির্মিত স্তম্ভ, এত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ।
৬ – লুসার্নের “লায়ন মনুমেন্ট” । ১৭৯২ সালের ফরাসী বিপ্লবের সময় ৭০০ সুইস গার্ডের স্মারক হিসেবে বেরথেল থরওয়াল্ডসেন এই মুর্তি নির্মান করেন পাথর কেটে এক পাহাড়ের গায়ে । এই ৭০০ জন বীর সৈনীকরা জানতেন না যে যাদের বাঁচাবার জন্যে তারা লড়াই করছেন, সেই রাজা ষোড়শ লুই , মেরি অ্যান্টয়নেট ও তাদের সন্তানদের নিয়ে ততক্ষণে পলায়ন করেছেন তাদেরকে না জানিয়েই । এই পিঠে ছুরি মারার মতন কাজের তীব্র নিন্দা করেন এবং তারই উপমা হিসেবে শিল্পীর এই দুখী সিংহের পিঠে একটা ভাঙ্গা বর্শা গেঁথে দেন ।
৭ – ইউরোপের সব থেকে সুন্দর "স্কোয়ার" হল ব্রাসেল্সের "গ্র্যান্ড প্লেস" । অসাধারণ এই শহরের আধুনিকতার বেড়া টপকে এখানে এলে মনে হবে সপ্তদশ শতাব্দীতে চলে এসেছি । অপুর্ব সুন্দর সুপ্রাচীন ক্যাথিড্রাল গুলোর গায়ে গায়ে অমুল্য সব শীল্পের নিদর্শন রয়েছে যা আমরা আগামী দুটো ছবিতেও দেখতে পাব ।
৮ ও ৯ – ব্রাসেল্সের ক্যাথিড্রালের গায়ে শীল্পকীর্তি।
১০ – “ম্যানেকিন পিস” নামক এই শিশুর প্রস্রাবরত মুর্তি ব্রাসেল্সের চিহ্ণ হয়ে গেছে । ১৩৮৮ সালে এই মুর্তি নির্মান করা হয় । এই মুর্তির একটি ইতিহাস হল, যখন জার্মান সেনারা বেলজিয়ামে এসে ত্রাসের সৃষ্টি করে, সব লোকেদের ওপর জুলুম চালায়ে, তখন এক ছোট্ট বালক এক বারান্দা থেকে সেই সেনাদের মাথায়ে প্রস্রাব করে । এটা তখনকার বেলজিয়ামের দুঃসাহসিকতার এক চিহ্ন হিসেবে দেখে অনেক মানুষ । তাই আজও সবাই এক নামে চেনে এই ম্যানেকিন পিস-কে।
১১ – এভেরার্ড টে সের্ক্লায়েস-এর শায়িত মুর্তি । এই মুর্তি তামার তৈরী । ব্রাসেল্সের মানুষেরা বিশ্বাস করেন যে এই মুর্তিকে ছুঁলে তা সৌভাগ্য নিয়ে আসে । তাই এখানে যেই আসে সেই ছুঁয়ে দেখে এই মুর্তি, পায়ের ধারের সারমেয়টিকে, এবং পরীর মুখটি । বাকি নির্মান পুরো তামার হলেও, মানুষের নিত্য স্পর্শ করা অংশগুলি তাই চকচকেই থেকে গেছে।
লেখা ও ছবিঃ
ঋতম ব্যানার্জি
কলকাতা