চল্লিশে কামাল
"চল্লিশ পেরোলেই চালশে"- বড়দের মুখে এরকম কথা শুনেছ কি? বা বইতে পড়েছ?
এই কথার মানে হল, চল্লিশ বছরে পৌঁছে গেছ মানে, তুমি এবার বুড়ো হয়ে গেছ, তোমার কাজকর্ম করার ক্ষমতা এবার কমে যাবে। একথাটা অবশ্য আহজকের দিনে মোটেও সত্যি নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এতটাই উন্নতি হয়েছে যে, চল্লিশ কেন, আশি পেরিয়েও অনেক মানুষ একেবারে দিব্বি কাজ কম্মো করে যাচ্ছেন। কিন্তু এক্কা-দোক্কার পাতায় এই 'চল্লিশ পেরোলেই চালশে'র- গপ্পোটা এল কেন?
এল, কারণ, গত ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ভারতের টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেইস এক রেকর্ড সৃষ্টি করলেন। চেক টেনিস খেলোয়াড় রাডেক স্টেপানেক এর সাথে জুটি বেঁধে, ব্রুনো সোয়ারেস ও আলেকজান্ডার পেয়ার জুটিকে হারিয়ে তিনি জিতে নিলেন ২০১৩ সালের ইউ. এস. ওপেন্স এ পুরুষদের ডাব্ল্স্ এর সেরার শিরোপা। আর এই খবরটা এত হইচই তুলেছে কেন?
হইচই তুলেছে কারণ, এই খেতাব জিতে লিয়েন্ডার হয়ে গেছেন গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা সব থেকে বেশি বয়সী পুরুষ। তাঁর বয়স ৪০ বছর। এবং সেই কারণে তিনি বিশ্ব্ রেকর্ড ও গড়ে ফেলেছেন।
আর এই ঘটনার পরে , অন্যান্য অনেকের সাথে তাঁকে উৎসাহ জানিয়েছেন স্বয়ং মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা, যিনি ৪৯ বছর বয়সে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে মহিলাদের মধ্যে সবথেকে বেশি বয়সে জেতার বিশ্ব রেকর্ড ধরে রেখেছেন। লিয়েন্ডার আর মার্টিনা এক সময়ে মিক্সড্ ডাব্ল্স্ জুটি হিসাবেও খেলেছেন ২০০৩ সালে এবং পরপর দুটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব ও জিতেছিলেন। মার্টিনা লিয়েন্ডারকে বলেছেন বয়সের কথা না ভেবে এর পরেও আরো খেলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে। নিজের এই খুব ভাল বন্ধুর কাছ থেকে এইরকম উৎসাহের কথা শুনে লিয়েন্ডার যে খুবই খুশি, সে তো বলাই বাহুল্য।
তাহলে দেখাই যাচ্ছে, চল্লিশ ছূঁয়ে ফেললেও লিয়েন্ডার মোটেও চালশেকে নিজের আশে পাশে আসতে দিতে রাজি নন!
মহাশ্বেতা রায়
পাটুলি
- বিস্তারিত
- লিখেছেন মহাশ্বেতা রায়
- ক্যাটfগরি: এক্কা-দোক্কা
উইম্বেলডন ২০১৩
অ্যান্ড্রু ব্যারন মারে, বা সংক্ষেপে অ্যান্ডি মারে। এই নামটা নিশ্চয়ই তোমার কাছে আর অপরিচিত নয়। গরমের ছুটিতে তুমি নিশ্চয়ই উইম্বলডনের খেলা দেখেছ আর খবর রেখেছ। আর ফাইনাল ম্যাচটা তো কোনভাবেই ভুলে যাওনি। সেই ফাইনালে গ্রেট ব্রিটেনের স্কটিশ খেলোয়াড় অ্যান্ডি মারে দারুণ টেনিস খেলে হারিয়ে দিলেন বিশ্বের এক নম্বর তারকা সার্বিয়ার নোভাক দিয়োকোভিচকে।
প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যে টেনিস টুর্নামেন্টগুলো হয় তার মধ্যে চারটে হল সম্মানের দিক দিয়ে সবার উপরে - এই টুর্নামেন্টগুলোকে বলা হয় গ্র্যান্ড স্লাম - অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন, উইম্বলডন আর ইউ এস ওপেন। এর মধ্যে একমাত্র উইম্বলডন আয়োজিত হয় ব্রিটেনে, লন্ডনে। প্রাচীনতম টেনিস টুর্নামেন্ট বলে সম্মান আর ঐতিহ্যের দিক দিয়ে উইম্বলডনকেই সবার উপরে রাখা হয়। তাই সব তারকারই স্বপ্ন থাকে জীবনে একবার উইম্বলডন জেতার। ব্রিটিশদের ঘরের মাটিতে সেই স্বপ্নপূরণ হতে তাদের অপেক্ষা করতে হল ৭৭ টা দীর্ঘ বছর। ১৯৩৬ সালে ফ্রেড পেরী উইম্বলডন জেতার পর এই প্রথমবার কোন ব্রিটিশ এই শিরোপা অর্জন করলেন। সেই জন্যই আরও বেশী করে ভেঙ্গে পড়ল ব্রিটিশদের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাস।
কিন্তু যদি শেষ এক বছর, বা হয়তো কয়েক বছরের দিকে ফিরে তাকাও ব্রিটিশ সন্তান অ্যান্ডির এই সাফল্য মোটেই অবাক হওয়ার মত নয়। এর আগে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল, ফাইনাল অবধি গিয়ে আন্ডি মারে শেষ মুহূর্তে হেরে যাচ্ছিলেন রজার ফেডেরার, নোভাক দিয়োকোভিচ, রাফায়েল নাদাল-দের কাছে। টেনিসের ইতিহাসে এদের প্রত্যেকের রেকর্ডই ঈর্ষণীয়। কিন্তু মারে যে এদের সাথে লড়াই করার জন্য পুরোদস্তুর প্রস্তুত সেটা পুরোপুরি বোঝা গেল শেষ বছরের ইউ এস ওপেন আর ওলিম্পিকের পর। ইউ এস ওপেনের ফাইনালে পাঁচ সেটের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে অ্যান্ডি মারে জিতে নিলেন জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্লামের শিরোপা - সেই বারেও নোভাক দিয়োকোভিচকে হারিয়ে। সেই বছরের অন্য বড় সম্মান এল যখন আন্ডি মারে ওলিম্পিক ফাইনালে হারিয়ে দিলেন রজার ফেডেরারকে, যিনি অনেকের মতেই টেনিসের ইতিহাসে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়।
অনেকেই হয়তো বলবেন যে প্রথম আর দ্বিতীয় রাউন্ডে যথাক্রমে নাদাল আর ফেডেরার অপ্রত্যাশিত ভাবে হেরে যাওয়া অ্যান্ডির কাজটা অনেকটাই সহজ করে দিয়েছিল। কিন্তু এটাও ঠিক যে বিশ্বের এক নম্বর তারকা দিয়োকোভিচ ফাইনাল অবধি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। সকলেই একপ্রকার ধরে নিয়েছিলেন যে আবার তীরে এসে তরী ডুববে অ্যান্ডি মারের। উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে ঘরের ছেলের সমর্থনের জন্য যদিও বিন্দুমাত্র অভাব ছিলনা। আর মারেও এইবার তাদের প্রত্যাশা আর ভালবাসার যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে জিতে নিলেন উইম্বলডনের শিরোপা। ফাইনালে দিয়োকোভিচকে একটিও সেট জিততে না দিয়ে - স্কোরবোর্ড দেখাল ৬-৪, ৭-৫, ৬-৪।
১৯৩৬ সালের পর প্রথম ব্রিটিশ আর ১৮৯৬ সালের পর প্রথম স্কটিশ অর্জন করলেন এই সম্মান। দীর্ঘ অপেক্ষার সমাপ্তি হল। আবেগ চেপে রাখতে পারলেন না অ্যান্ডি মারে। স্টেডিয়ামে উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন আপনজনদের।
- বিস্তারিত
- লিখেছেন পাভেল ঘোষ
- ক্যাটfগরি: এক্কা-দোক্কা