আমার বাড়ির পাশের ছোট্টো গাছ। অবশ্য খুব বেশি ছোট্টো নয়। সেই গাছটায় অনেক সরু সরু ডালপালায় ভরা। সেগুলো অনেক সবুজ পাতা দিয়ে মোড়া। আমাদের বারান্দায় একটি কাঠির ঝাড়ুনি রাখা থাকতো। মনে হলো দিন দিন ঝাড়ুনির চেহারা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। ব্যাপারটি কী! কিছুই তো বুঝতে পারছি না। হঠাৎ দেখি এক জোড়া কাক চুপি চুপি বারান্দায় এসে ঘুরাঘুরি করছে। আমাকে দেখতে পেয়ে ফুড়ুত করে উড়ে পালিয়ে গেল। একটু পরে দেখি ঝাড়ুনি থেকে দুটো কাঠি ভেঙে নিয়ে গাছের ডালে বসল। তারপর একটা ঝুড়ির উপর রাখল। ঝুড়ির ভিতরে গিয়ে কাক দুটো বসল। এবার বুঝতে পারলাম, আমাদের কাঠি চুরি করে বাসা বানিয়েছে গাছের ডালে।
আমি, বাবা ও মা রোজ বাসাটা দেখতাম। একদিন দেখি সাদা ডিম। অন্য পাখিরা মাঝে মাঝে ওদের বিরক্ত করতে আসত, আমরা তাদের তাড়িয়ে দিতাম। রোজ কাক দুটোকে খেতে দিতাম। কখনো বিস্কুট, কখনো রুটি, যখন যা বাড়িতে থাকত। অনেক ছেলেমেয়ে গাছে উঠে বাসা দেখার চেষ্টা করতো। আমরা তাদের মানা করতাম। আমি আমার বন্ধুদের এই কাক জোড়ার কথা বলেছিলাম। বন্ধুরা প্রায় জিজ্ঞাসা করতো, “আজ কী দেখলি? তারপর –”।
একদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, হঠাৎ চোখ পড়ে গেল সেই বাসাটার দিকে। সে কী খুশি! কী আনন্দ! ডিম থেকে একটা ছোট্টো কাক। পালক নেই টকটকে লাল গায়ে। মা কাকটা ডানা দিয়ে বাচ্চাটাকে ঢেকে রাখত। বাবা কাকটা বাসার কাছাকাছি বসে পাহারা দিত। কোন পাখি এলে চিৎকার করে তাড়িয়ে দিত। ঠিক খাবার সময় হলে আমাদের বারান্দায় এসে ডাকতো। খাবার দিলে ঠোঁটে করে নিয়ে বাসায় চলে যেতো। বাচ্চা কাকটা মুখ খুলে বসে থাকতো খাওয়ার জন্য। আর মা কাকটা টুকরো টুকরো করে যত্ন সহকারে খাইয়ে দিতো ভালোবেসে আদর করে। হায়!
আজকাল অনেক মা বাবাদের সময় কোথায় ভালোবেসে আদর করে খাওয়াবার। অন্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে ছুটতে হয় সকাল থেকে সন্ধ্যে। ওরা বেড়ে উঠে মা বাবার সঙ্গহীন পরগাছার মতো। ওদের কথা ভেবে মনটা হঠাৎ খারাপ লাগলো।
শর্মিষ্ঠা মুখার্জী
অণুশক্তিনগর, মুম্বই