খেলাঘরখেলাঘর

lila title

 

" এতই যদি খারাপ লাগে ইস্কুলে যাও কেন? বড়রা যখন এতই অবুঝ তখন তাদের কথা মেনে নাও কেন?"

"ঘোতন কোথায় ?" বলে সেই যে একটা গপ্পো তিনি লিখেছেন, সেই গপ্পোতে সেই যে সেই অদ্ভুত লোকটা ঘোতনের মনের কথা দিব্বি বলে দিয়েছিল - সেই গপ্পোটা কি পড়েছ ? আর এই গপ্পোটা আর এমন আর অনেক গপ্পো যিনি লিখেছেন, চেন তাঁকে? এমন করে যে মনের কথা কেমন করে টের পেতেন তিনি ! তিনি তো নিজে ছিলেন বয়সে অনেক বড়,কিন্তু তাঁর লেখা পড়লে মনে হবে আরে  এ যে আমি লিখেছি !

যখন পিসির "খোকা আসছে বলে খেলনা হচ্ছে, মিষ্টি তৈরী হচ্ছে, আমাদের আর কেউ চায়না" ভেবে কান্না পায় আর বনে চলে যেতে ইচ্ছা করে, তা সে যতই সবাই হিংসুটে বলুক না কেন -- ভাগ্যিস তখন তাঁর লেখা 'মাকু' পড়েছিলাম ! - তাই তো জানতে পারলাম যে আমার একার ই নয়, সোনা আর টিয়া বলে আমারি মতন ছোট দুজন মেয়ের এরকম মনে হয়; আর তারা তো সত্যি সত্যি চলে গেল কালিয়ার বনে, যেখান থেকে কেউ ফেরেনা আর সেখানে দেখা পেয়ে গেল মাকুর। মাকু কিন্তু আসলে মানুষ নয়; ঘড়িওয়ালা বানিয়েছে তাকে। কিন্ত হাসি কান্নার কল না দিলে কেমন করে সে বিয়ে করবে পরীদের রানী কে?

আর 'হলদে পাখির পালক' এর কথা নাই বা বললাম। সেখানে দুমকার কত আশ্চর্য গপ্পের কথা রয়েছে। রয়েছে ভুলো কুকুরের বাচ্চা ছেলে হয়ে যাওয়ার কথা। এই গপ্পে ঝগড়ু বলে "সত্যি যে কোথায় শেষ হয় আর স্বপ্ন যে কোথায় শুরু হয় বলা মুশকিল।" আবার "জাদুকর" গপ্পোটাও বা কম কিসে ? যেখানে জাদুকর জগাইদাকে বেড়াল বানিয়ে দিল ? কিন্তু আবার মানুষ করে দেওয়ার সময় আসল  বেড়াল নাকি বেড়াল হয়ে যাওয়া জগাইদা, কাকে যে মানুষ করে দিল সেটাও তো কেমন যেন গুলিয়ে গেল !!

আরো যে কত কত মনের কথা তিনি লিখে গেছেন... যেমন " ডায়েরি" গপ্পোটার শুরু তে - "মিথ্যা কথা বলা যে এমন কিছু অন্যায় এ আমি বিশ্বাস করিনা, এমনকি মাঝে মাঝে মিথ্যা কথা বলার দরকার হয় । আমি তো প্রায়ই মিথ্যা কথা বলি। আরো কত কী করি !...বড়দের কথা আমার ঢের ঢের  জানা আছে। তারা নিজেরাই যথেষ্ট দোষ করে; আবার আমাদের বলতে আসে । ওসব চালাকি আমার কাছে চলবেনা ।"

তিনি জন্মেছিলেন ১৯০৮ সালে । লেখালেখির পাশাপাশি আরো অনেক কাজ করেছেন। যেমন পড়িয়েছেন দার্জিলিং এর মহারানী গার্লস স্কুল এ, শান্তিনিকেতনে আর আশুতোষ কলেজে।  "আকাশবানী" মানে রেডিও তে শিশু ও নারী বিভাগের সহ প্রযোজক হিসাবে  চাকরি করেছেন; আর করেছেন 'সন্দেশ' সম্পাদনা; খাবার সন্দেশ নয় কিন্তু ! এ হল সেই 'সন্দেশ' পত্রিকা যেখানে ১৯২২ সালে মানে ১৪ বছর বয়সে তাঁর লেখা প্রথম ছাপার অক্ষরে বেরোয়। তখন সম্পাদক ছিলেন তাঁর বড়দা সুকুমার রায়। তাঁর সেই প্রথম ছাপা গপ্পের নাম "লক্ষী ছেলে" ।  সেই যে শুরু...তারপর থেকে ২০০৭ সালে আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে অবধি বড়দের জন্য একটু  একটু  লিখলেও, বেশীটাই লিখেছেন ছোটদের জন্য। তাতেই ছিল তাঁর আনন্দ। কেন? কারন তিনি, লীলা মজুমদার, মনে করতেন -

"ছোটরা বই পড়ে  বেঁচে থাকার জন্য।আনন্দের জন্য। এর বেশি কারণ দিয়ে কি দরকার ?

 

মৌপিয়া মুখোপাধ্যায়

 

 

মৌপিয়া অধ্যাপনা করেন। পাশাপাশি নানা জায়গায় বেড়াতে, খেতে এবং খাওয়াতে, দিশি-বিলিতি ছবি দেখতে আর বই পড়তে বড়ই ভালবাসেন। দুষ্টু-মিষ্টি কচিকাঁচাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে চান। 'কুটুস' এর সাথে মৌপিয়ার নিত্যিদিনের ওঠাবসা।