খেলাঘরখেলাঘর

দুরন্ত ডেনিস


ডেনিস দেওয়ালের দিকে মুখ করে বসে আছে। তার মা তাকে এই শাস্তি দিয়েছেন। সে মনে মনে ভাবছে- তার মা কিনা তার স্কুলের টিচারদেরই বিশ্বাস করেন, কিন্তু তার নিজের ছেলেকে বিশ্বাস করে্ননা...তাকে যে এভাবে কতক্ষণ বসে থাকতে হবে কে জানে...জোয়ি তো কতবার ডেকে ডেকে ফিরে গেল...কখন সে খেলতে যাবে... শাস্তির মেয়াদ ফুরোলে ডেনিস তার আদরের কুকুর রাফ কে নি্যে চলল জোয়ি কে খুঁজতে। জোয়ি হল ডেনিসের ছায়াসঙ্গী। আর ডেনিস তাকে নানারকম বাহাদুরি দেখিয়ে থাকে। যাইহোক, খেলার শুরুতেই ডেনিস বলটাকে নিয়ে জো-ও-ও-রে ছুঁড়ে দিল...

মিস্টার উইলসন

মিস্টার উইলসন ডেনিসের পাশের বাড়িতেই থাকেন। তিনি চা খেতে খেতে সুন্দর বিকেল উপভোগ করছিলেন;হঠাত একটা বল এসে তাঁর চায়ের কাপটা ভেঙ্গে চুরমার করে দিল! তিনি বলে উঠলেন- আমার সেই রাতের কথা খুব ভাল করে মনে আছে, ডেনিস যেদিন জন্মালো, সেই রাতে আকাশ থেকে তারা খসে পড়েছিল, চাঁদের চারপাশে ছিল এক গোলাকার চক্র। আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমাদের ভবিষ্যত দুর্বিপাকে পড়তে চলেছে!!"
এদিকে ডেনিসও বুঝতে পেরেছে তার আর এই চত্ত্বরে থাকা উচিত নয়। সে হাঁটা লাগাল উলটোপথে। সে দেখতে পেল তার বাবা অফিস থেকে ফিরছেন। জোয়ি কে সে বলল -"আজ আমি তোকে একটা খুব সহজ জিনিষ শেখাব" - এই বলে সে তার পা টা সামনের দিকে বাড়িয়ে দিল।অমনি তার বাবা হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। ডেনিস জোয়িকে বোঝাল যে কাউকে মাটিতে ধড়াম্‌ করে ফেলাটা কত সোজা। জোয়ি ও একটা নতুন জ্ঞান পেয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি গেল।

ডেনিস-জোয়ি


এই ভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকে ডেনিসের নানান কান্ড কারখানা। সে তো রোজ সকালে সবার বাড়ি আসে খবরের কাগজের সাথে। তার জন্য আজ প্রায় ৪৮ টি দেশের ১০০০ টি খবরের কাগজের কমিক্স পাতাতে জায়গা পাকা।
কার্টুনিস্ট হ্যাঙ্ক কেচাম এর হাত ধরে দুর্দান্ত ডেনিসের চলা শুরু। হ্যাঙ্ক এর আসল নাম হেনরি। ছোট বেলা থেকেই তার আঁকা আঁকির দিকে প্রবল ঝোঁক। মজার মজার ছবি আঁকত হ্যাঙ্ক। ওয়ল্ট ডিসনির 'থ্রি লিটল পিগস্‌' দেখার পরেই সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যে সে কার্টুনিস্টই হবে। ১৯৩৮ সাল নাগাদ হ্যাঙ্ক পাড়ি দিল লস অ্যাঞ্জেলেস এ। সে ওয়াল্টার ল্যানজ্‌ স্টুডিওতে কাজ শিখতে আরম্ভ করল। তৈরি হয়ে নিয়ে সে চলল ডিসনি স্টুডিওর উদ্দেশ্যে। প্রায় ১২ টি ডোনাল্ড ডাক এপিসোডে সে সহকারীর ভূমিকায় কাজ করল।
১৯৪২ তে হ্যাঙ্ক এর জীবনে এল এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। তিনি ফোটোগ্রাফিক স্পেশালিস্ট হিসাবে ইউ এস নেভি রিসার্ভে কাজ আরম্ভ করলেন। যুদ্ধ বিগ্রহের মধ্যেও তিনি তাঁর কার্টুনিস্ট সত্ত্বাকে বাঁচিয়ে রাখলেন। চার বছর পরে তিনি ভাবলেন, আর না, এবার তিনি শুধুই কার্টুন করার দিকেই মন দেবেন। তিনি তাঁর স্ত্রী ও ছোট্ট ছেলে ডেনিস কে নিয়ে নিউ ইয়র্কের কাছাকাছি এলাকায় চলে এলেন। কাজ কর্ম ভালোই চলতে লাগল।
তখন ১৯৫০ সাল। হ্যাঙ্কের বাড়িটা প্রায় কাঁপছে। তার ছেলে ডেনিস সারা ঘর লন্ডভন্ড করে ফেলেছে। ডেনিসের মা চেঁচিয়ে উঠলেন- হ্যাঙ্ক, ইয়োর সন্‌ ইস আ মিনেস্‌ !!
আর আমরাও বুঝতে পারলাম 'ডেনিস দ্য মিনেস' এর সৃষ্টির রহস্যটা...কি, তুমিও বুঝতে পারলে তো? ১৯৫১ সাল এর ১২ই মার্চ এসে গেল কমিক স্ট্রীপ জগতের সবচেয়ে দুর্দান্ত ছোট্ট ছেলেটা- যার নাম ডেনিস!


পূর্বাশা
কলকাতা

ছবিঃ
ডেনিস দ্য মিনেস